
ছবিঃ সংগৃহীত
সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ইরানের নৌবাহিনী ‘মৌজ’ শ্রেণির বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ ‘সাহান্দ’-এ যুক্ত করেছে দুটি অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—‘সায়াদ থ্রি’ ও ‘নাব্বাব’। ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০১৮ সালে প্রথমবার চালু হওয়া 'সাহান্দ’ মৌজ শ্রেণির তৃতীয় জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ৯৫ মিটার, ওজন প্রায় ১২০০ থেকে ১৫০০ টন। জাহাজটিতে রয়েছে চারটি ডিজেল ইঞ্জিন, যা সর্বোচ্চ ৩০ নট গতিতে চলতে সক্ষম। এছাড়া লজিস্টিক সহায়তা থাকলে এটি একটানা ১৫০ দিন সাগরে থাকতে পারে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে জাহাজটি মেরামতের সময় বন্দর আব্বাসে ডুবে যায়। শ্যাফট অপসারণের পর জাহাজে পানি ঢুকে পড়লে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর ইরানি নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল ও ভারী যন্ত্রপাতির সহায়তায় মাত্র ১০ দিনের মধ্যে সাহান্দকে উদ্ধার করে পুনরায় সচল করা হয়। যেখানে সাধারণত এ ধরনের উদ্ধার অভিযানে কয়েক মাস সময় লাগে।
নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহরাম ইরানি জানান, দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে সাহান্দকে আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালীভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন এই জাহাজে তিন শ্রেণির মোট ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে।
দুর্ঘটনার আগে সাহান্দ আন্তর্জাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে অংশ নিয়েছে। ২০২১ সালে এটি 'মাকরান' জাহাজের সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগরে ১৩৩ দিনের অভিযান পরিচালনা করে এবং রাশিয়ার নৌ দিবসে অংশ নেয়। এছাড়া এটি উত্তর ভারত মহাসাগরে যৌথ মহড়াতেও অংশ নেয়।
দুর্ঘটনার পূর্বে জাহাজটিতে ছিল একটি ৭৬ মিলিমিটার কামান, কামান্দ CIWS, ৩০ ও ২০ মিলিমিটারের কামান, ১২.৭ মিলিমিটার ভারী মেশিনগান, আটটি কাদের এন্টি-শিপ মিসাইল, চারটি মেহরাব স্যাম, দুটি তিন নলবিশিষ্ট টরপেডো লঞ্চার এবং একটি হেলিকপ্টার ডেক। জাহাজটিতে রয়েছে উন্নত রাডার ও ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং স্টেলথ প্রযুক্তির নকশা, যা শত্রুপক্ষের নজরদারী রাডারকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম।
‘সায়াদ থ্রি’ হলো একটি উন্নত প্রযুক্তির ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা ১২০ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ মিসাইলসহ নানা ধরনের আকাশ হুমকি প্রতিরোধে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্র খোরদাদ-১৫, তালাশ-৩ এবং বাবার-৩৭৩ এর মতো আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ করতে পারে।
অন্যদিকে ‘নাব্বাব’ হচ্ছে জুবিন নামক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নৌ সংস্করণ। এতে রয়েছে নিজস্ব রাডার, কমান্ড সিস্টেম এবং উল্লম্ব ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার। ‘নাব্বাব’ একযোগে ১০০টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং ৮টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর একসঙ্গে আঘাত হানতে সক্ষম। এর এঙ্গেজমেন্ট রেঞ্জ ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এটি হেলিকপ্টার, ড্রোন ও নিচু দিয়ে উড়ে আসা বিমান প্রতিরোধে সক্ষম।
ইরানি নৌবাহিনী জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ‘সাহান্দ’ ছাড়াও ‘তেফতান’-এর মতো অন্যান্য মৌজ শ্রেণির যুদ্ধজাহাজেও ‘নাব্বাব’ যুক্ত করা হবে। এমনকি নির্মাণাধীন তেফতানের ছবিতেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আধুনিকায়ন শুধু 'সাহান্দ'-এর নয়, বরং ইরানের নৌবাহিনীর সামগ্রিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকেই আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
মারিয়া