
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে যেমন দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় উৎসাহ দিচ্ছে, অন্যদিকে স্পষ্ট করে বলেছে এই দ্বন্দ্বে তারা সামরিকভাবে জড়াবে না।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মন্তব্যে এই দুই দিকই পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তবে একটি বিষয় জোর দিয়ে বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদকে কোনোমতেই সহ্য করা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সরাসরি ফোনে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ত্যামি ব্রুস জানান, রুবিও দুই দেশকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
রুবিও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি সংলাপে বসুক এবং যোগাযোগ রক্ষার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুক।”
উল্লেখ্য, মার্কো রুবিও কেবল পররাষ্ট্রমন্ত্রীই নন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য নীতির দায়িত্বেও আছেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভূমিকাও পালন করছেন।
সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান
মুখপাত্র ত্যামি ব্রুস এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। কাশ্মীরের পহেলগামে যেটা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।”
২২ এপ্রিল পহেলগামে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এই ঘটনার পরই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে ওঠে। জঙ্গি হামলার জবাবে ভারতের পাল্টা সামরিক অভিযান এবং দু’দিনব্যাপী সংঘর্ষে বহু প্রাণহানি ঘটে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর এক পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি রুবিওকে বলেছেন ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল “টার্গেটেড এবং পরিমিত” এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ভারতের পক্ষে এই অবস্থান কেন গুরুত্বপূর্ণ?
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ‘হাত গুটিয়ে থাকা’ অবস্থান ভারতের জন্য আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকেই সমর্থন করেছিল। সেসময় প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং হেনরি কিসিঞ্জারের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র কেবল কূটনৈতিক নয়, সামরিকভাবে পাকিস্তানকে সহায়তাও করেছিল। এমনকি সেভেনথ ফ্লিটের যুদ্ধজাহাজ বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়েছিল, যা ভারতকে কৌশলগতভাবে চাপে ফেলেছিল।
কিন্তু এবার সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয়েই যুদ্ধের বিষয়ে নির্লিপ্ত থেকেছেন এবং এটিকে 'আমাদের বিষয় নয়' বলে অভিহিত করেছেন।
এছাড়া রুবিও ২০১৯ সালেও পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিলেন। বালাকোট স্ট্রাইকের পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছিলেন, “ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।”
যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াতে চাচ্ছে না ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায়, তবে তাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে জোরদার করছে। সন্ত্রাসে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি, কূটনৈতিক সংলাপে উৎসাহ এবং সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা সবমিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত এই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিকভাবে নিজের পক্ষে টানার সুযোগ পাচ্ছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3uuuc83s
আফরোজা