
ছবি: সংগৃহীত
২০০০ সালে বিল ও মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস যখন গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তাদের পরিকল্পনা ছিল মৃত্যুর পরও দীর্ঘকাল ধরে এই প্রতিষ্ঠান যেন তাদের সম্পদের মাধ্যমে জনসেবা চালিয়ে যেতে পারে। তবে এখন, মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস জানিয়েছেন, তিনি আর এতটা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে চান না।
এক ঘোষণায় গেটস বলেন, তিনি আগামী ২০ বছরের মধ্যে তার প্রায় সম্পূর্ণ সম্পদ- যা প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হচ্ছে- দান করে দেবেন এবং ২০৪৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর গেটস ফাউন্ডেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্বাস্থ্য, বৈদেশিক সাহায্য ও অন্যান্য জনসেবা খাতে ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে- যেগুলোর পেছনে গেটস ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এতে গবেষণা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নের অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিল গেটস চান, ফাউন্ডেশন আরও দ্রুত গতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য ও সমতা বিষয়ক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিক এবং অন্য ধনকুবেরদের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। এই অঙ্গীকার তার বহুদিনের দানবিষয়ক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা। ২০১০ সালে তিনি, তার প্রাক্তন স্ত্রী ফ্রেঞ্চ গেটস ও ওয়ারেন বাফেট মিলে শুরু করেন ‘গিভিং প্লেজ’, যেখানে ধনী ব্যক্তিদের তাদের অধিকাংশ সম্পদ জীবিতাবস্থায় বা মৃত্যুর পর দান করার অনুরোধ জানানো হয়। বর্তমানে এতে ২৪০-এর বেশি সইকার রয়েছে।
বিল গেটস লিখেছেন, “আমার মৃত্যুর পর মানুষ অনেক কিছু বলবে, কিন্তু আমি নিশ্চিত করতে চাই যে ‘সে ধনী অবস্থায় মারা গেছে’- এমনটা কেউ বলবে না। এত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান বেচে থাকতে আমি এমন সম্পদ রেখে যেতে চাই না, যা দিয়ে মানুষের উপকার হতে পারত।”
গেটস ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দান করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নতুন টিকা, রোগ নির্ণয় পদ্ধতি এবং চিকিৎসা সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে অবদান। করোনাভাইরাস মহামারির পর বিল গেটস তার দানের পরিমাণ বাড়িয়েছেন, তবে এবারের ঘোষণা তার সম্পদ ব্যবহারে এক নতুন গতি আনছে। ফাউন্ডেশন এটিকে আধুনিক ইতিহাসে “সবচেয়ে বড় দাতব্য প্রতিশ্রুতি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
পরবর্তী ২০ বছরে ফাউন্ডেশন তিনটি মূল লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে:
১. মায়েদের ও নবজাতকদের প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু রোধ
২. প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ নির্মূল
৩. বিশ্বের শত শত কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা
ঘোষণায় ফাউন্ডেশন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অগ্রগতির ধারা স্থবির হয়ে পড়ছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেটস অভিযোগ করেন, ধনকুবের ইলন মাস্ক সরকারের কার্যকারিতা দপ্তরে কাজ করে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমিয়ে “বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র শিশুদের হত্যা করছেন।” তিনি জানান, ফেব্রুয়ারিতে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইউএসএআইডি তহবিল কমানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ঘোষণা উপলক্ষ্যে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধনকুবের মাইক ব্লুমবার্গ, সংগীতশিল্পী জন বাতিস্তে এবং অন্যান্য দাতব্য অংশীদাররা। ফাউন্ডেশনের সিইও মার্ক সুজমান বলেন, “আমরা এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছি। আমাদের অনেক অর্জন এখন ঝুঁকিতে।”
তবে নিজের ব্লগ পোস্টে বিল গেটস আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) অগ্রগতি ও তার দান একত্রে কাজ করে বিশ্বের উন্নয়নের গতি বাড়াবে।
বর্তমানে বিল গেটসের সম্পদ ১০৮ বিলিয়ন ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ারস ইনডেক্স-এ তিনি বিশ্বের পঞ্চম ধনীতম ব্যক্তি। এখন তিনি জানিয়েছেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে তার সম্পদের ৯৯% হ্রাস পাবে। এই ২০০ বিলিয়ন ডলার আসবে ফাউন্ডেশনের বিদ্যমান ৭৭ বিলিয়ন ডলারের তহবিল এবং তার ব্যক্তিগত ব্যবসা উদ্যোগ থেকে, যার মধ্যে রয়েছে নিউক্লিয়ার এনার্জি কোম্পানি টেরা পাওয়ার।
২০২১ সালে গেটস দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের পর ফ্রেঞ্চ গেটস ফাউন্ডেশন ছেড়ে দেন এবং ২০২২ সালে জানান, তিনি তার অধিকাংশ সম্পদ গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দান করবেন না।
এই ঘোষণা আসে এমন এক সময়ে, যখন মাইক্রোসফট তার প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে। গেটস লিখেছেন, “এই মাইলফলক উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আমার উপার্জিত সম্পদ দান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়াই আমার কাছে সঠিক মনে হচ্ছে।”
সূত্র: https://shorturl.at/hLhDK
মিরাজ খান