ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

সেনা-বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে মানবঢাল রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১৫ জুন ২০২৪

সেনা-বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে মানবঢাল রোহিঙ্গারা

.

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর মানুষকে সেনাবাহিনীতে জোর করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গাদের রণক্ষেত্রে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর জোরপূর্বক নিয়োগের লক্ষ্য হলো সেনাদের হতাহত পক্ষত্যাগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। প্রতি মাসে হাজার সেনা নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সামরিক বাহিনীর। সেনা নিয়োগ সংশ্লিষ্ট আইনটি দেশটির নাগরিকদের ওপর কার্যকর হওয়ার কথা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

তাত্ত্বিকভাবে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুরা ১৯৮২ সালের এক আইনের আওতায় নাগরিকত্ব বঞ্চিত। কয়েক দশক ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছেন এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কে কোন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সেটির ভিত্তিতে সেনাবাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠী উভয়ের পক্ষ থেকে তাদের হয়ে লড়াইয়ের চাপের কথা জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এপ্রিল মাসে সতর্ক করে বলেছিলেন, দুই সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যখানে আটকা পড়েছে রোহিঙ্গারা। উভয় বাহিনীই অতীতে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে। জাতিসংঘ আরও সতর্ক করে বলেছিল, রোহিঙ্গা রাখাইন গোষ্ঠীকে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তারা পাল্টাপাল্টি সহিংসতায় গড়াতে পারে।

গত সপ্তাহে অ্যাক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। মানবাধিকার পর্যালোচনাকারীরা অন্তত আটটি গ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের কার্যালয়ের মিয়ানমার টিমের প্রধান জেমস রোডেহাভের বলেছেন, সেনাবাহিনী আরাকান আর্মি প্রায় সময় রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর দুপাশে অবস্থান নিচ্ছে। এতে মধ্যখানে বেসামরিকরা আটকা পড়ছেন। সম্প্রতি রাখাইন থেকে ফেরা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ের্সের (এমএসএফ) এক প্রকল্প পরিচালক নিমরাত কৌর বলেছেন, সহিংসতা হয়তো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন করে তুলতে পারে। তিনি বলেন, এখন আমাদের ন্যূনতম টিম সেখানে রয়েছে। এপ্রিলে আমাদের এমএসএফ-এর অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কৌর বলেছেন, সংঘাতে লিপ্ত উভয়পক্ষ ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামের কাছে স্থল মাইন পুঁতে রাখছে। এই বিষয়ে গ্রামবাসীদের অবহিত করা হচ্ছে। ফলে অনেকে আহত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গারা। তাদের নাগরিকত্বের অধিকার নেই, চলাচলের স্বাধীনতা নেই। তারা যেখানে আছেন সেখানে আটকা পড়েছেন। কর্তৃপক্ষের জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ এড়াতে তাদের লুকিয়ে থাকাও খুব কঠিন।

সম্প্রতি অ্যাক্টিভিস্টরা বলেছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির থেকে তরুণদের অপহরণ করছে। তাদেরকে মিয়ানমার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের লড়াইয়ে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থানকারী এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি বলেছেন, তার ১৯ বছর বয়সী ভাতিজা অপর দুই ছেলেকে মে মাসের শুরুতে মিয়ানমার নিয়ে গেছে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি। এরপর তাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেছেন, মানুষ বলছে তরুণদের অপহরণ করে মিয়ানমারের সরকারের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। তারা খুব করে চেষ্টা করছেন, কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আব্দুল্লাহ (ছদ্মনাম) অন্ধকারে বসে ছিলেন। সময় তার গ্রামের ৩০ জন প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। এই গ্রামটি সীমান্তবর্তী রাজ্য রাখাইনে অবস্থিত। সেনারা ওই ৩০ জনকে অস্ত্রের মুখে একটি ট্রাকে তুলে সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যায়। সকালের দিকে তারা দাঁড়িয়েছিলেন এক সামরিক কমান্ডারের সামনে। তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন স্থানীয় একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে। 

 

×