
ছবি: প্রতীকী
সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভোগেন। বিশেষ করে যাঁরা হাঁপানি, অ্যালার্জি, ব্রঙ্কাইটিস বা অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা। সকালবেলা শ্বাসকষ্ট হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে—রাতভর ধুলাবালুতে ঘেরা বিছানায় শোয়া, ঘরের বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া, অথবা শরীরের শ্লেষ্মা জমে গিয়ে তা ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এসব কারণে ঘুম থেকে উঠে আমরা দেখি বুক ভার লাগছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কখনো কাশিও শুরু হয়। তাই এই সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করণীয় রয়েছে, যেগুলো জানলে উপকার পাওয়া সম্ভব।
প্রথমেই, যাঁদের পুরনো শ্বাসকষ্টের ইতিহাস আছে বা অ্যাজমার রোগী, তাঁরা দম নিতে কষ্ট হলে দ্রুত ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ইনহেলার সব সময় হাতে রাখা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোন ইনহেলার কোন পরিমাণে ব্যবহার করবেন, তা জানা থাকা উচিত। ইনহেলার ছাড়াও অনেক সময় হালকা গরম পানিতে ভাপ নেওয়াও উপকারে আসে। ভাপ নেওয়ার সময় মাথায় তোয়ালে দিয়ে গরম পানির পাত্রের উপর ঝুঁকে ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিতে হয়। এতে নাক ও গলার মধ্যে জমে থাকা শ্লেষ্মা বের হয়ে যায় এবং শ্বাস নেওয়া সহজ হয়।
অনেকে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পরই প্রচণ্ড ঠান্ডা পরিবেশে চলে যান, জানালা খুলে দেন কিংবা বাইরে হাঁটতে বের হন। তবে শ্বাসকষ্ট হলে সকালে অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা ভালো। এ সময় শরীর হঠাৎ ঠান্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে এলে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে পড়ে, যা আরও কষ্টের কারণ হয়। তাই শীতকালে বিশেষভাবে গরম জামাকাপড় পরে, গলায় মাফলার পেঁচিয়ে রাখার অভ্যাস করতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই বিছানা গুটিয়ে ফেলা, বালিশ ঝাড়া কিংবা ধুলোময় ঘরের কাজ করা উচিত নয়। এতে বাতাসে ধুলার কণিকা ভেসে বেড়াতে থাকে, যা ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট থাকলে ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই রাতের বেলায় করে রাখা ভালো।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি পান। অনেকে রাতে পানি পান না করে ঘুমাতে যান, যার ফলে সকালে শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকে এবং শ্লেষ্মা ঘন হয়ে যায়। এই ঘন শ্লেষ্মা গলার ভেতর আটকে গিয়ে শ্বাসের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত পানি পান করা এবং বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম পানি পান করলে ভেতরের শ্লেষ্মা নরম হয়ে বেরিয়ে যেতে সুবিধা হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, কিছু খাবারের প্রতিক্রিয়ায় সকালে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। যেমন, অনেকের দুধ, ডিম, ঠান্ডা পানীয় বা নির্দিষ্ট কিছু খাবারে অ্যালার্জি থাকে। রাতে এসব খাবার খেলে সকালে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই যেসব খাবারে সমস্যা হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলতে হবে।
যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের জন্য এই সমস্যা আরও ভয়ানক হতে পারে। ধূমপান শ্বাসনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে হলে ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করতেই হবে।
আরেকটি উপকারী অভ্যাস হলো নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা প্রাণায়াম করা। সকালে নিরিবিলি স্থানে বসে ধীরে ধীরে গভীর নিশ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার অভ্যাস করলে ফুসফুস শক্তিশালী হয় এবং শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। এতে করে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলেও দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
তবে যদি সকালবেলা শ্বাসকষ্ট নিয়মিত হয় এবং ধীরে ধীরে তা বেড়ে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় এই লক্ষণগুলি বড় কোনো শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতার পূর্বাভাস হতে পারে, যেমন ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) বা নিউমোনিয়া।
সকালে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সমস্যা অবহেলা না করে প্রাথমিকভাবে কিছু ঘরোয়া ব্যবস্থা ও সচেতনতা গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি চলতে থাকলে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। শ্বাস-প্রশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, এটি ঠিকভাবে না চললে পুরো শরীরের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়। তাই শ্বাসকষ্ট হলে বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে সচেতনতা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এম.কে.