ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩ লাখ স্ট্রোক! আপনি কতটা নিরাপদ? আজই জানুন লক্ষণগুলো

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:৪২, ২২ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩ লাখ স্ট্রোক! আপনি কতটা নিরাপদ? আজই জানুন লক্ষণগুলো

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছর বাংলাদেশে তিন লাখেরও বেশি মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যার একটি বড় অংশ তরুণ ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। অথচ সচেতনতা থাকলে অনেক সময় এই প্রাণঘাতী বিপদ এড়ানো সম্ভব। দ্রুত চিকিৎসা, লক্ষণ চেনা ও কুসংস্কার দূর করাই হতে পারে জীবন বাঁচানোর চাবিকাঠি।

স্ট্রোক কী?

স্ট্রোক তখনই ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় বা রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ অকেজো হয়ে যায়। এর পরিণতি হতে পারে পক্ষাঘাত, কথা বা চলাচলের অক্ষমতা, এমনকি মৃত্যু।

লক্ষণ কীভাবে বুঝবেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রোকের তাৎক্ষণিক লক্ষণগুলো হলো:

1. কথা জড়িয়ে যাওয়া বা অস্পষ্ট উচ্চারণ

2. মুখের এক পাশে ঝুলে যাওয়া

3. একপাশের হাত বা পা দুর্বল হয়ে যাওয়া

4. হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া

5. হঠাৎ প্রবল মাথাব্যথা

6. অচেতনতা বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা


এই লক্ষণগুলো এক বা একাধিক একসাথে দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।


জরুরি সময়ে কী করবেন?

বিশ্বজুড়ে স্ট্রোক চেনার জন্য সহজ একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যার নাম FAST:

F = Face (মুখ): হাসতে বললে কি এক পাশ নিচে ঝুলে পড়ে?

A = Arms (হাত): উভয় হাত তুলতে বলুন—একটা কি পড়ে যাচ্ছে?

S = Speech (কথা): কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কি?

T = Time (সময়): দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিন।


স্ট্রোকের চিকিৎসায় প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ৩ থেকে ৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু হলে থ্রম্বোলাইটিক থেরাপির মাধ্যমে রক্তনালির জমাট খোলানো যায়।


কেন বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি?

🔹বাংলাদেশে স্ট্রোক বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

🔹উচ্চ রক্তচাপ

🔹অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস

🔹ধূমপান ও তামাক ব্যবহার

🔹অতিরিক্ত লবণ ও ফাস্টফুড খাওয়া

🔹স্থূলতা ও শরীরচর্চার অভাব

🔹বায়ু দূষণ ও মানসিক চাপ


শহর-গ্রাম উভয় এলাকাতেই এই ঝুঁকি বাড়ছে, এবং অনেকেই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা করান না।


সচেতনতা না থাকলে কী ঘটে?

ICHRI-বিএরডেম হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মোঃ নাজরুল হোসেন বলেন, “অনেকে এখনও স্ট্রোককে হৃদরোগ মনে করেন। ফলে মুখ বেঁকে যাওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা গেলেও রোগীকে স্ট্রোক ইউনিটে না নিয়ে কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যান।”

এর ফলে স্ট্রোকের চিকিৎসার "গোল্ডেন টাইম" নষ্ট হয়, যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি আরও বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়, অথচ অনেকেই সচেতন নন।”


কী করা প্রয়োজন?

1. নিয়মিত রক্তচাপ ও সুগার পরীক্ষা

2. ধূমপান ও তামাক ত্যাগ

3. সুষম খাদ্য ও লবণ নিয়ন্ত্রণ

4. নিয়মিত ব্যায়াম

5. মানসিক চাপ কমানো

6. স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলে সচেতনতা কার্যক্রম

7. প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিউরো স্ক্রিনিং


সরকার ও সমাজের করণীয়

🔹প্রতিটি জেলায় স্ট্রোক ইউনিট স্থাপন

🔹উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের স্ট্রোক প্রশিক্ষণ

🔹স্ট্রোক বিষয়ে জাতীয় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

🔹পারিবারিক ও সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ

🔹জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও রেফারেল ব্যবস্থা উন্নয়ন

 

স্ট্রোক একটি নীরব ঘাতক। এটি কারও বয়স দেখে আসে না। শুধু সচেতনতা আর সময়মতো ব্যবস্থা নিয়েই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। প্রত্যেকটি পরিবারে এ বিষয়ে আলোচনা হোক, প্রাথমিক শিক্ষা হোক শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত।

মস্তিষ্কের সুস্থতা মানেই জাতির মেধা ও মর্যাদা রক্ষা। এখনই সময় সজাগ হওয়ার।

Mily

×