
ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তে শর্করা এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই রোগে শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা উৎপন্ন ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না, ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমতে থাকে। যদিও ডায়াবেটিস শনাক্তের সবচেয়ে ভালো উপায় রক্ত পরীক্ষা, তবে শরীরে কিছু স্পষ্ট লক্ষণ দেখা দেয় যা উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে। এখানে এমন ৭টি প্রাথমিক লক্ষণের কথা বলা হলো। এগুলোর কোনোটি লক্ষ্য করলে দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি।
ঘন ঘন প্রস্রাব
ডায়াবেটিসের প্রথম দিকের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার প্রস্রাবের প্রয়োজন হওয়া, বিশেষত রাতের বেলায়। এমনকি পানি পান করার পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনি অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করার জন্য বেশি পরিশ্রম করে, যার ফলে মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতে প্রস্রাবের পরিমাণ সাধারণত বেশি হলেও হঠাৎ এ ধরনের বৃদ্ধি ডায়াবেটিসের সতর্কবার্তা হতে পারে।
অতিরিক্ত পিপাসা
ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে শরীরের পানি বেরিয়ে যায়, আর সেই পানির ঘাটতি পূরণ করতে শরীর আপনাকে বারবার পানি খেতে বাধ্য করে। এটি এক ধরনের চক্রাকারে চলতে থাকে। স্বাভাবিক তৃষ্ণার সঙ্গে এই তৃষ্ণার পার্থক্য হলো, এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং পানি খাওয়ার পরও বারবার পিপাসা পায়।
অতৃপ্ত ক্ষুধা
স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার পরও বারবার ক্ষুধা লাগা ডায়াবেটিসের আরেকটি ইঙ্গিত হতে পারে। ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করায় শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে না, ফলে কোষগুলো শক্তির জন্য ক্ষুধার্ত থাকে। এই কারণে মস্তিষ্ক বারবার খাবারের সংকেত পাঠায়, যদিও প্রকৃতপক্ষে শরীরের অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন নেই।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা
ভালোভাবে ঘুমানোর পরও শরীরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা ডায়াবেটিসের অন্যতম উপসর্গ। গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করে শক্তি যোগাতে না পারায় শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়। দৈনন্দিন ছোট ছোট কাজও করতে হিমশিম খেতে হয়।
ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হওয়া
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে ত্বক শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত হয়ে পড়ে। অনেকেই এটিকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কারণ শুষ্ক ত্বক সাধারণ সমস্যা। কিন্তু লোশন ব্যবহার করার পরও যদি শুষ্কতা ও চুলকানি না কমে, তাহলে সতর্ক হওয়া দরকার।
চোখ ঝাপসা দেখা
রক্তে শর্করার ওঠানামা চোখের লেন্সকে প্রভাবিত করে। এতে লেন্সের আকার বদলে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে পারে। এই ঝাপসা দৃষ্টি স্থায়ী নাও হতে পারে, তবে ঘন ঘন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ত্বকে গাঢ় দাগ পড়া (Acanthosis Nigricans)
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকের ঘাড়, বগল, কুঁচকির অংশ বা ত্বকের ভাঁজে গাঢ়, মসৃণ ও মখমলের মতো দাগ পড়ে। এই লক্ষণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে হয়ে থাকে এবং এটি স্পষ্টভাবে ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস হতে পারে।
ডায়াবেটিস প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই এই লক্ষণগুলোর কোনোটি শরীরে দেখা দিলে দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা করে নিন। সময়মতো পদক্ষেপই আপনাকে সুস্থ জীবন উপহার দিতে পারে।
মিমিয়া