
ছবি: প্রতীকী
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মোবাইল চুরির অপবাদ নিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া মো. শাহীন (২১) নামের এক শ্রমিক ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনায় সোমবার দুপুরে নিহতের মামা ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে ৭ জনের নামের একটি আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে শনিবার (৫ জুলাই) ভোরে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ব্রাক্ষন্দী ষাড়পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. শাহীন ওই গ্রামের মৃত মো. নাঈমের ছেলে। শাহিন আসামিদের মালিহা ফুড প্রোডাক্ট কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
জানা গেছে, ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর থেকে মো. শাহিন একই গ্রাম তার মামা বাড়িতে থাকতেন। সেখানে তিনি মো. মঞ্জুরুলের মালিহা ফুড কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ঘটনার আগের দিন মঞ্জুরুলের একটি মোবাইল হারিয়ে গেলে শাহিনকে মোবাইলটি চুরির অপবাদ দেয় তারা এবং ওই দিন রাত ৯টার সময় শাহিনের বাড়িতে গিয়ে একই গ্রামের মালিহা ফুড প্রোডাক্ট এর মালিক নুরু মিয়ার ছেলে মঞ্জুর (৪২), পোয়া মিয়ার ছেলে মহিবুর (৪০), ইজুকারীর ছেলে মঞ্জুর হোসেন (৪১), মৃত হানিফ কারীর ছেলে নুরু মিয়া (৬০), নুরু মিয়ার ছেলে মোশারফ (৩৫), মৃত সাজুর ছেলে রিপন (৪০) ও ফয়জুদ্দিনের ছেলে আনারসহ (৪০) আরও কয়েকজন তাকে এলোপাতারি মারধরসহ কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন।
এসময় মাটিতে লুটিয়ে পরেন শাহিন। পরবতীর্তে মোবাইল ফেরত না দিলে মেরে ঝুলিয়ে রাখবে বলে হুমকি প্রদান করে তারা চলে যান।
ঘটনার পর শাহিনের মামা কাজ থেকে বাসায় ফিরে দেখে অজ্ঞান অবস্থায় শাহিন মাটিতে পড়ে আছে। এসময় মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করে শাহিনের থেকে সব ঘটনা জানতে পারেন তিনি। এদিকে আত্মহত্যার আগে শাহিন একটি অডিও রেকর্ডে বলে যান, ‘আমি মোবাইল চুরি করিনি। আমাকে শুধু শুধু মারধর করা হয়েছে। আমার জন্য আমার মামা—মামি অপমান হয়েছে। আমি এই জীবন রাখব না।’
উক্ত ঘটনায় এলাকায় জানাজানি হলে এবং লজ্জার ভয়ে পরদিন ভোরে সবার অজান্তে নিজ ঘরের বাঁশের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দেন শাহিন। ভোর ৬টায় তার মামা কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন লাশ ঝুলছে। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
নিহতের মামা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার এতিম ভাগ্নেকে তারা নির্যাতন করেছে। আমরা তাদের বিচার চাই।’
আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাছির উদ্দিন জানান, ‘থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
মোঃ শরীফ ভূইয়া/রাকিব