ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যেভাবে ভালো রাখবেন আপনার কিডনি

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১২ জুন ২০২৫

যেভাবে ভালো রাখবেন আপনার কিডনি

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে কিডনি রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা নীরবে মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে বা বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। অনেক সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াই কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই কিডনি সুস্থ ও ভালো রাখার উপায়গুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ একবার কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপনই একমাত্র পথ, যার ব্যয়ভার বহন করা এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই অসম্ভব।

কিডনি রোগের প্রধান কারণ ও প্রতিরোধ:
বেশিরভাগ কিডনি রোগের কারণ আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। এর প্রধান কারণগুলো হলো:

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
স্থূলতা
নেফ্রাইটিস
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
ধূমপান
ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার
জন্মগত ও বংশগত কিডনি রোগ
মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও কিডনির পাথর
একটু সচেতন জীবনযাপন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে জন্মগত ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা করলে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কিডনি বৈকল্য ঠেকানো সম্ভব।

উপসর্গ ও লক্ষণ:
কিডনি বিকল হওয়ার ৭০ থেকে ৯০ ভাগ নষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে:

প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা প্রস্রাবের রং পরিবর্তন।
পা, পায়ের গোড়ালি ও চোখের নিচে ফোলা ভাব।
অবসাদ ও দুর্বলতা।
শ্বাসকষ্ট।
বমি বমি ভাব বা বমি, অরুচি।
বিনা কারণে গা চুলকানো।
রাতে বারবার প্রস্রাব, প্রস্রাবে ফেনা বা প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া ও ঘন ঘন প্রস্রাব।
মেরুদণ্ডের কোনো এক পাশে অথবা তলপেটে ব্যথা।
শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মগত কোনো ত্রুটি আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা জরুরি।

ঝুঁকিতে যারা এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণ:
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করতে হলে কারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছেন, তা জানা জরুরি। নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা কিডনি বৈকল্যের ঝুঁকিতে আছেন:

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
বংশগত কিডনি রোগের ইতিহাস যাদের আছে।
ধূমপায়ী ও মাদকসেবী।
যাদের ওজন বেশি।
যারা দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেছেন।
যাদের বারবার কিডনিতে পাথর বা মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ হয়।
শিশুকালে যাদের কোনো কিডনি রোগ ছিল।
৪০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা।
বছরে মাত্র দুটি পরীক্ষা - প্রস্রাবে আমিষের উপস্থিতি এবং রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা - প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। ক্রিয়েটিনিন রিপোর্ট থেকে কিডনির কার্যকারিতা বা ইজিএফআর (eGFR) স্কোর হিসাব করা যায়।

কিডনি ভালো রাখার ৮টি উপায়:
কিডনি রোগের ভয়াবহতা এবং এর চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় বিবেচনা করে, সচেতনতা এবং সুস্থ জীবনধারা অনুশীলনই এই মরণব্যাধি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিচে ৮টি উপায় উল্লেখ করা হলো, যা আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে:

১. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন দ্রুত হাঁটা বা নিয়মিত ব্যায়াম করা।
২. পরিমিত ও সুষম খাবার: ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে নিয়মিত শাকসবজি ও ফল খাওয়া, চর্বিজাতীয় খাবার ও লবণ কম খাওয়া।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা ও প্রস্রাবের অ্যালবুমিন পরীক্ষা করা এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন এ-ওয়ান সি (HbA1c) ৭-এর মধ্যে রাখা।
৪. ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতা: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথার ওষুধ সেবন না করা।
৫. ধূমপান ও মাদক বর্জন: ধূমপান ও মাদক সেবনের অভ্যাস ত্যাগ করা।
৬. নিয়মিত পরীক্ষা: ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের প্রতি ছয় মাস অন্তর কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।
৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ ১৩০/৮০-এর নিচে (এবং যাদের প্রস্রাবে অ্যালবুমিন থাকে, তাদের ১২০/৭০-এর নিচে) রাখা।
৮. পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান: পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা এবং পানিশূন্যতা পরিহার করা।

সচেতন হন এবং সুস্থ জীবনধারার চর্চা করুন। এতে আপনি নিজে সুস্থ দীর্ঘ জীবন পাবেন, আর দেশ পাবে কর্মঠ ও শক্তিশালী একটি সুস্থ-সবল জাতি।

সাব্বির

×