ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রেড মিট বেশি খেলেই বাড়ছে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি! সর্তক হোন

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১২ জুন ২০২৫

রেড মিট বেশি খেলেই বাড়ছে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি! সর্তক হোন

বিশ্বে দ্রুত বাড়ছে ফ্যাটি লিভারের হার। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নতুন নাম মেটাবলিক ডিসফাংশন অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়েটোটিক লিভার ডিজিজ বা MASLD। এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশের খাদ্যাভ্যাসে আছে অতিরিক্ত পরিমাণে রেড ও প্রক্রিয়াজাত মাংস। বিশেষজ্ঞদের মতে, রেড মিটের সঙ্গে লিভারের চর্বি জমে যাওয়ার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

কীভাবে রেড মিট বাড়ায় লিভার রোগের ঝুঁকি?
গরু, খাসি, শুকরের মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের রেড মিট এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, হটডগ কিংবা বেকনে থাকে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই ধরনের চর্বি শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে। এর প্রভাবে ওজন বেড়ে যায় এবং লিভারে চর্বি জমে MASLD রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাংগোন হেলথ-এর হেপাটোলজিস্ট ও মেডিসিন বিভাগের ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক লিসা গানঝু জানিয়েছেন, শুধু রেড মিট নয়, উচ্চমাত্রার ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ, ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত চর্বি এবং শর্করা সমৃদ্ধ খাবারও এই রোগের বড় উৎস হতে পারে।

MASLD কী এবং কেন এটি ভয়ঙ্কর?
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন MASLD রোগে আক্রান্ত। এই রোগের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে খাদ্যাভ্যাস ও জেনেটিক উপাদান এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শুধু MASLD-ই নয়, এই রোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অস্বাভাবিক কোলেস্টেরলের ঝুঁকিও। অর্থাৎ MASLD থাকলে অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়।

ছোট পরিবর্তনে আসতে পারে বড় ফল
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় মেডিসিন-এর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান অ্যানি গুইনেইনের মতে, ওজন কমানোই MASLD চিকিৎসার মূল কৌশল। শরীরের মোট ওজনের মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ কমাতে পারলেই লিভারে চর্বির পরিমাণ কমে যায়। আর ৭ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমাতে পারলে লিভারের প্রদাহ ও ফাইব্রোসিস (টিস্যুতে ক্ষত) হ্রাস পায়।

তিনি বলেন, “আমরা যত বেশি ওজন বাড়াই, লিভারেও তত বেশি চর্বি জমে। আবার ওজন কমালে লিভারের চর্বিও কমে যায়।”

এই রোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন চিনি ও মিষ্টি পানীয় বাদ দিয়ে ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার এবং স্বাস্থ্যকর তেল গ্রহণের ওপর জোর দিতে। রেড মিটের পরিবর্তে সপ্তাহে অন্তত একটি বেলায় মুরগি, ডাল, সয়াবিন, মসুর বা ছোলা খাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

গুইনেইনের ভাষায়, “রোজকার খাবারে অল্প একটু পরিবর্তন করলেই লিভারের প্রদাহ কমানো সম্ভব। যেমন সাধারণ বেকনের পরিবর্তে টার্কি বেকন বা গরুর সসেজের বদলে মুরগির সসেজ খাওয়া যেতে পারে।”

কোন খাদ্যাভ্যাস হবে নিরাপদ?
রেড মিটের বদলে উদ্ভিদভিত্তিক, নিরামিষ বা মেডিটেরেনিয়ান ধাঁচের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে MASLD-এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। এই খাদ্যতালিকায় থাকে না অতিরিক্ত চর্বি ও প্রক্রিয়াজাত মাংস। বরং প্রাধান্য পায় শাকসবজি, ফলমূল, শস্য ও স্বাস্থ্যকর তেল।

গুইনেইন আরও বলেন, “আমরা যত বেশি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই, তা আমাদের দেহে প্রদাহ বাড়ায়। এই প্রদাহ সরাসরি লিভারে গিয়ে প্রভাব ফেলে এবং রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।”


রেড মিট ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আসক্তি শুধু ওজনই বাড়ায় না, বরং লিভারে চর্বি জমিয়ে ডেকে আনে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা। তবে খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন ও সচেতনতা আপনাকে রাখতে পারে ফ্যাটি লিভারসহ বহু রোগের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ। আজ থেকেই শুরু হোক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার যাত্রা।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/mw4j7xsd

আফরোজা

×