ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮৮

ফের শুরু হবে করোনা পরীক্ষা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ১১ জুন ২০২৫

ফের শুরু হবে করোনা পরীক্ষা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ নির্দেশনা

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়ছে

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। ফলে, সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে করোনার নমুনা পরীক্ষা ফের চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেখানেই এ পরীক্ষা শুরু হবে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ এসব তথ্য জানান।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে নমুনা পরীক্ষা চালু হবে। যেসব হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, শুধু সেখানেই শুরুতে এ সুবিধা মিলবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে, প্রতিদিনই দেশে বাড়ছে করোনার নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ। জনমনেও তৈরি হচ্ছে আতঙ্ক। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় করোনার সংক্রমণ বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ছুটি শেষে জনসমাগম বাড়লে রাজধানীতে ব্যাপকহারে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তবে তারা জানান, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত এক সপ্তাহের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আক্রান্তদের অধিকাংশই রাজধানী ঢাকায়। ঈদের ছুটি থাকার পরও ঢাকায় সংক্রমণের এ হার বাড়াচ্ছে উদ্বেগও। এরই মধ্যে ছুটি শেষে ধীরে ধীরে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এতে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে ঢাকা। একটু একটু করে বাড়ছে জনসমাগমও। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এতে সংক্রমণের হার আরও ব্যাপকভাবে বাড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ফলে, ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে এখনই সরকারি পদক্ষেপের ওপরও জোর দিয়েছেন।
সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে করোনার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব আছে সেখানে পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, যেসব হাসপাতালে আরটিপিসিআর ল্যাব রয়েছে, করোনা পরীক্ষা পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কিট আমদানির জন্য সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আবার চালু করা যাবে, তবে তা সীমিত পরিসরে। যাদের উপসর্গ থাকবে, তারাই পরীক্ষার সুযোগ পাবেন। সংক্রমণের হার যদি আরও বাড়ে, তাহলে পরীক্ষার পরিধিও বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, যাদের করোনা উপসর্গ থাকবে, তারাই শুধু পরীক্ষার অনুমতি পাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, গত একদিনে ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শতকরা হিসেবে অত্যন্ত উচ্চ শনাক্ত। এরই মধ্যে ৯ জুন থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে এবং বিমানবন্দরসহ সব প্রবেশপথে হেলথ স্ক্রিনিং অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়।
এ অবস্থায় জনগণকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ নির্দেশনা ॥ আবারও বিশ্বের অনেক দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েছে। বাংলাদেশেও রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে করোনার বিস্তার ঠেকাতে রোগী ও তাদের স্বজন, চিকিৎসায় নিয়োজিতদের জন্য দেওয়া হয়েছে ১১টি নির্দেশনা। যাদের করোনা হয়েছে এমন সন্দেহ করা হবে, তাদের বিষয়েও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে এসব নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সকল স্থল/নৌ/বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কসমূহে নজরদারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শগুলো হলো-  ১. জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন এবং উপস্থিত হতেই হলে সেক্ষত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন; ২. শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ হতে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন; ৩. হাঁচি/কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন; ৪. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন; ৫. ঘনঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড); ৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না এবং ৭. আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। 
এছাড়া সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে যা করতে হবে, সেগুলো হলো- ১. জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে হবে; ২. রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে; ৩. রোগীর সেবাদানকারীদেরও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং ৪. প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়নের (১৬২৬৩) নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্যও বলা হয়েছে।
একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮৮ ॥ দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ২৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬১ জনই বরিশালের বাসিন্দা। তবে, এ সময় নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৮ জন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগেই ২৬১ জন, ঢাকা দক্ষিণে ১২, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১, ময়মনসিংহে দুইজন এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে একজন করে আক্রান্ত আছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজন মারা যান।

×