ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশেও বাড়ছে শিশুদের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি, সতর্ক থাকার সময় এখনই

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১১ জুন ২০২৫

বাংলাদেশেও বাড়ছে শিশুদের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি, সতর্ক থাকার সময় এখনই

ছবি: সংগৃহীত

চার বছর আগে বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া করোনাভাইরাস আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব আবার দেখা দিতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যার মধ্যে অনেকেই শিশু।

স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে শিশুদের নিয়ে। কারণ, সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে—শিশুরা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে পারে, যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘লং কোভিড’।

‘জামা পেডিয়াট্রিক্স’-এ প্রকাশিত ‘ম্যাস জেনারেল ব্রিগহাম’-এর গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডে আক্রান্ত শিশুদের প্রায় ১৫ শতাংশের দেহে তিন মাস বা তারও বেশি সময় ধরে নানা উপসর্গ থেকে যাচ্ছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১ হাজারের বেশি শিশুর ওপর করা এই গবেষণায় উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

কোন বয়সের শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে?

1. ২ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে প্রায় ১৪% লং কোভিডে ভুগেছে।
2. ৩-৫ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে এই হার ১৫%।

উপসর্গগুলো কী রকম?

২ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে:

1.ঘুমে ব্যাঘাত

2.খিদে কমে যাওয়া

3.নাক দিয়ে পানি পড়া

4.দীর্ঘস্থায়ী কাশি


৩-৫ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে:

1.শুকনো কাশি

2.ক্লান্তিভাব

3.খেলাধুলায় আগ্রহের অভাব


এছাড়াও, কিশোর বয়সীদের মধ্যে স্নায়বিক সমস্যা, মাথা ঘোরা, ঘাড় ও পিঠব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি, আচরণগত পরিবর্তনের মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

এই সব উপসর্গ শুধু সাময়িক নয়, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদিও বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত গুরুতর লং কোভিডের হার খুব বেশি নয়, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবহেলা করার সুযোগ নেই।

শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা দে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে এখনো লং কোভিডের প্রকট কেস তেমন দেখা না গেলেও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে এবং হালকা উপসর্গ বহন করছে।’’

তিনি আরও বলেন, “করোনাভাইরাস আমাদের পরিবেশেই থেকে যাবে। তাই মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা—এসব অভ্যাস আমাদের জীবনযাপনের অংশ করে নিতে হবে।”

কী করবেন অভিভাবকরা?

1. বাচ্চার যেকোনো অসুস্থতা বা আচরণগত পরিবর্তন নজরে রাখুন।
2. ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা ক্লান্তিভাব দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
3. শিশুদের স্কুল বা খেলার মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শেখান।
4. মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে তুলুন (যদি বয়স উপযোগী হয়)।
5. হাত ধোয়ার অভ্যাস এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দিন।

ভয় নয়, সচেতনতাই উত্তম প্রতিরক্ষা

করোনা এখন আর নতুন রোগ নয়, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে সচেতন না থাকলে শিশুর স্বাস্থ্যে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সাবধানতা অবলম্বন করলেই অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

Mily

×