
ছবি: সংগৃহীত
হার্টের ব্লক বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD) এখন ঘরে ঘরে পরিচিত এক আতঙ্কের নাম। এই রোগে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য উপাদান জমে ব্লক তৈরি হয়, যা হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সাধারণভাবে এই ব্লক দূর করতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কিংবা বাইপাস সার্জারির মতো চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সার্জারি ছাড়া কি এই ব্লক দূর করা সম্ভব?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা কথা বলেছি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ সাফায়েত হোসেনের (এফসিপিএস, এমডি - কার্ডিওলজি) সঙ্গে। তিনি বলেন, “সব হার্ট ব্লকের জন্য সার্জারি প্রয়োজন হয় না। যদি ব্লকটি ৭০% এর নিচে হয় এবং রোগীর উপসর্গ নিয়ন্ত্রিত থাকে, তাহলে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন ও মেডিকেশনের মাধ্যমে অনেকাংশেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।”
সার্জারি ছাড়াই হার্টের ব্লক কমানোর কার্যকর উপায়গুলো:
১. লাইফস্টাইল পরিবর্তন
লাইফস্টাইল পরিবর্তনই হচ্ছে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
* কম চর্বিযুক্ত খাবার: স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্সফ্যাট বাদ দিয়ে ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার যেমন মাছ, বাদাম, অলিভ অয়েল খাওয়া উপকারী।
* প্রতিদিন হাঁটা বা ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি এক্সারসাইজ যেমন brisk walking, সাইক্লিং ইত্যাদি।
* ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওবেসিটি হৃদরোগের একটি বড় ঝুঁকি।
* ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার: এগুলো রক্তনালির ক্ষতি করে ব্লক আরও বাড়িয়ে দেয়।
২. মেডিকেশন
ডা. সাফায়েত বলেন, “স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ব্লকের প্রগ্রেশন বন্ধ করে বা কিছুটা কমায়।” সাথে ব্যবহৃত হয়—
* অ্যান্টিপ্লেটলেট ড্রাগ যেমন অ্যাসপিরিন
* ব্লাড প্রেসার ও সুগার নিয়ন্ত্রণে ওষুধ
৩. নন-ইনভেসিভ চিকিৎসা পদ্ধতি
বর্তমানে কিছু নন-ইনভেসিভ থেরাপিও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যেমন:
EECP (Enhanced External Counter Pulsation): এক ধরনের বাইপাস থেরাপি যা পায়ের নিচে বিশেষ কাপড় বেঁধে রক্তচাপের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়।
চেলেশন থেরাপি: যদিও এখনো অনেক বিতর্কিত, কিছু রোগী এতে উপকার পাচ্ছেন বলেও অভিমত রয়েছে।
৪. যোগ ও মেডিটেশন
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ও মনোসংযোগভিত্তিক অনুশীলন স্ট্রেস হ্রাস করে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
শেষ কথা:
হার্ট ব্লকের চিকিৎসা রোগীর ব্লকের মাত্রা, উপসর্গ ও অন্যান্য শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা. সাফায়েতের পরামর্শ, “প্রাথমিক পর্যায়ে হার্টের ব্লক ধরা পড়লে সেটি সার্জারি ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত চেকআপ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ওষুধ এবং জীবনযাপনেই হতে পারে জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি।”
আসিফ