ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ শুরু করলে তা কি কখনো বন্ধ করা সম্ভব?

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ৮ মে ২০২৫

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ শুরু করলে তা কি কখনো বন্ধ করা সম্ভব?

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বর্তমানে একটি নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন এই সমস্যায় ভুগছেন। অনেকেই যখন প্রথমবার উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন, তখন তাদের মনে একটি সাধারণ প্রশ্ন জাগে — “এই ওষুধ কি সারাজীবনই খেতে হবে? একসময় কি এটা বন্ধ করা সম্ভব?”

চলুন, চিকিৎসকদের মতামত ও গবেষণার আলোকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বোঝার চেষ্টা করি।

ওষুধ বন্ধের সম্ভাবনা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর
উচ্চ রক্তচাপ একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, কিন্তু পুরোপুরি ‘সুস্থ’ বা ‘নিরাময়যোগ্য’ হিসেবে ধরা যায় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত মেনে চললে ওষুধ বন্ধ করার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

১. রক্তচাপের মাত্রা ও ধরণ
প্রি-হাইপারটেনশন বা হালকা হাইপারটেনশন (১৩০–১৩৯/৮০–৮৯ mmHg) থাকলে শুধু জীবনধারার পরিবর্তনেই অনেক সময় ওষুধ ছাড়াই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

মাঝারি থেকে গুরুতর হাইপারটেনশন (১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি) হলে ওষুধ লাগেই। তবে যদি পরে জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন আসে, তাহলে ধীরে ধীরে ওষুধ কমিয়ে বন্ধ করার সুযোগ থাকে।

২. জেনেটিক বা পারিবারিক ঝুঁকি
যদি পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ইতিহাস থাকে, তাহলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ দীর্ঘদিন খাওয়ার প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে ওষুধ বন্ধ করা সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে।

৩. জীবনধারার পরিবর্তন কতটা কার্যকর
ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে হয়:

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম
  • ওজন কমানো ও নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • লবণ, তৈলাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

যেসব রোগী এসব অভ্যাস কঠোরভাবে মেনে চলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অনেক সময় ওষুধ কমিয়ে ধীরে ধীরে বন্ধ করতে পারেন।

 চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা বিপজ্জনক
অনেক সময় রোগীরা নিজেদের ভালো লাগা অনুযায়ী ওষুধ বন্ধ করে দেন বা মাঝে-মধ্যে খান। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপের কোনও উপসর্গ নাও থাকতে পারে, কিন্তু এটি নিঃশব্দে শরীরের হৃদপিণ্ড, কিডনি, চোখ ও মস্তিষ্কের ওপর ক্ষতি করে চলে। হঠাৎ ওষুধ বন্ধ করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা কিডনি ফেলিওর হতে পারে।

তাই ওষুধ কমানো বা বন্ধ করার আগে চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।

এসএফ

×