
দেখতে দেখতে রমজান শুরু হয়ে গেল- এসময় সবারই স্বাস্থ্য সচেতন থাকলে ভালো। বিশেষ করে একজন গর্ভবতী নারীর জীবনে ঝুঁকি ও মানসিক চাপ যুক্ত হয় যখন তারা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। আর গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বিপদ ডেকে আনতে পারে মা ও গর্ভস্থ শিশুর উভয়েরই। অনেক সুস্থ গর্ভবতী মুসলিম নারী রোজা পালন করেন। কিন্তু যাদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা অন্যান্য জটিলতা আছে, তারা রোজা রাখার সময় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হবে। কারণ, গর্ভবতী নারীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া অর্থাৎ রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়া, হাইপারগ্লাইসেমিয়া রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া, পানিশূন্যতা, কিটোঅ্যাসিডোসিস ও থ্রম্বোঅ্যাম্বোলিজমের ঝুঁকি থাকে। রোজা রেখে এই ধরনের সমস্যা হলে মা ও অনাগত সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
রোজা রাখতে যা করবেন
যদি মনে করেন ডায়বেটিকস থাকার পরও আপনি রোজা রাখতে পারবেন সেরকম শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য আছে তাহলে রমজানের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে। রোজা রাখার সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কী হবে। মা ও শিশুর ওপর ডায়াবেটিসের প্রভাব পড়বে কিনা। ইনসুলিন ইনজেকশন যদি দিতে হয় তবে সেটা কোন সময়ে দিবেন। কোন ধরনের জটিলতা হতে পারে। যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয় তবে কি করবেন। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। মিষ্টি ফলের রস ও চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়া যাবে না। লবণাক্ত ও বাইরের ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই সময়ে অতিরিক্ত চা কফিও খাওয়া যাবে না। যথেষ্ট আঁশসমৃদ্ধ খাবার ও প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে। ইফতার থেকে সাহারি পর্যন্ত দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা দরকার। কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ বা উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীরা যতটা সম্ভব দেরিতে সেহরি খাবেন। আর অনেকটা সময় নিয়ে আস্তে আস্তে ইফতারি করবেন।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ওষুধের প্রয়োজন হলে মুখে খাওয়ার ট্যাবলেটের পরিবর্তে ইনসুলিন ব্যবহার অধিক কার্যকরী। কখন ইনসুলিন নিবেন তা ডাক্তারের কাছে জেনে নিবেন। অনেক গর্ভবতী নারীর ডায়বেটিকস থাকার পরও ইনসুলিন লাগবে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই সময় সবারই সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তাই ইফতারির এক থেকে দেড়ঘণ্টা পর নিয়মিতভাবে হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম করতে পারেন। কোনো অবস্থাতেই ভারী কাজ বা ভারী ব্যায়াম করা যাবে না। এ সময় অনেকেরই খাবারে অরুচি, বমি ভাব বেড়ে যায়। আবার বিশেষ কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যেতে পারে। ফলে ডায়াবেটিসের মাত্রা খুব বেশি ওঠানামা করতে পারে। তাই নিয়মিতভাবে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করাও জরুরি। গর্ভাবস্থায় যদি রোজা রাখতে চান তাহলে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শের সঙ্গে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে একজন ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
লেখক: প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,
শিবচর। চেম্বার : প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ,
পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতাল লি:
মাদারীপুর।