প্যানিক ডিজঅর্ডার ও হার্টের অসুখের ভাবনা
এটি এক ধরনের টেনশনজনিত অসুখ, যেখানে হঠাৎ তীব্র আকারে হার্ট অ্যাটাকের,প্যারালাইসিসের,শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার,ও মৃতুর অহেতুক ভীতি আসে। বুক ধড়ফড় নিয়ে আমাদের সবারই আতঙ্ক থাকে এই বুঝি হার্টের সমস্যা হলো। আমার মৃত্যু ঘনায়ে আসছে। আসলে পেলপিটেশন হওয়া মানেই হার্টের অসুখ নয়। মামুনের বয়স ২৫ বছর। তার হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা শুরু হয়। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় তখন।
এর সঙ্গে যোগ হয় হাত-পা অবশ হয়ে আসা, বুকে ব্যথা করা। ক্রমশ তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। মনে হয় এখনই মরে যাবে। এই ধরনের রোগীরা একটার পর একটা ইসিজি আর ইকোকার্ডিওগ্রাম করতে করতে তার চিকিৎসা ফাইল অনেক বড় করে ফেলেন। ডাক্তারও বদলাতে থাকেন তার রোগ ধরতে পারছে না বিধায়।
এর মধ্যে রোগীর গায়ে কিন্তু বড় অসুখের সিল পড়ে গেছে। আর আত্মীয়স্বজনরা বলতে থাকে ওকে কোনো বড় কাজে দিও না। ওর বড় জটিল অসুখ। আসলে এটি একটি টেনশন বা অস্থিরতা গ্রুপের রোগ, যাকে আমরা প্যানিক ডিজঅর্ডার বলে থাকি।
রোগীদের ভাবনাঃ
১. তার হার্টের অসুখ এজন্য বারবার ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করে বেড়াচ্ছে।
২. মাথা ঝিমঝিম করছে-মানে স্টোক করে ফেলবে।
৩. হাত-পা অবশ হয়ে আসছে, মনে হয় প্যারালাইসিস হয়ে যাবে।
৪. যে কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে।
কী ভাবে বুঝবেন যে প্যানিক ডিজঅর্ডার রোগে ভুগছেন:
]১. হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা ।
২. দম বন্ধ হয়ে আসা, বড় বড় করে হাঁপানি রোগীর মত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া।
৩. হাত-পা অবশ হয়ে আসা। শরীরে কাঁপুনি হওয়া।
৪. বুকের মধ্যে চাপ লাগা এবং ব্যথা অনুভব করা।
৫. এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো রোগী বলে হঠাৎ পেটের মধ্যে একটা মোচর দেয়, তারপর ওপর দিকে উঠে বুক ধড়ফড় শুরু হয়, সঙ্গে সঙ্গে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। আর কথা বলতে পারে না।
৬. বমি বমি ভাব লাগে। পেটের মধ্যে অস্বস্তি বোধ লাগা ও গলা শুকিয়ে আসা।
৭. পেটের মধ্যে গ্যাস ওঠে, খালি গ্যাস গ্যাস ওঠে এবং বুকে চাপ দেয়।
৮. দুশ্চিন্তা থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। কোনো কোনো রোগী বুকে ব্যথা ও হাত-পায়ের ঝিমঝিমকে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ মনে করে প্রায়ই ছুটে যান হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার দেখাতে।
৯. মৃত্যু ভয় দেখা দেওয়া, মনে হয় যেন এখনই মরে যাবেন রোগ যন্ত্রণায়।
১০. নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা।
১১. বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া / ইসিজি করা।
১২. দূরে কোথাও গেলে স্বজনদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যায়, যেন মাঝখানে অসুস্থ হলে ধরতে পারে।
১৩. নামাজ পড়তে গেলে একপাশে দাঁড়ায়, যেন অসুস্থ হলে তাড়াতাড়ি বের হতে পারে।
১৪. রোগীদের মধ্যে ভয় কাজ করে, এই বুঝি আবার একটি অ্যাটাক হতে পারে।
১৫. রোগের লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই শুরু হয়, ১০ থেকে ২০ মিনিট পর কমে যায়।
১৫. সেফ্টি বিহেভিয়ার যেমন অ্যাটাকের সময় বসে পড়া, কোনো কিছু হাত দিয়ে ধরে সাপোর্ট নেওয়া ইত্যাদি লক্ষণ রোগীর মাঝে দেখা দেয়। যা কি-না হৃদরোগীদের মাঝে লক্ষণীয় নয়।
কী কী পরিণতি হতে পারে।
১.সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে, এ ধরনের রোগী ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সর্বস্বান্ত হয় এবং সব শেষে নিজে একজন হার্টের রোগী বলে কাজকর্ম ছেড়ে দেয়।
২. বিষণœতায় ভুগতে পারে।
৩. নেশায় জড়িয়ে যেতে পারে।
৪. এগোরেফোবিয়া নামক আরও একটি সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। তখন রোগীরা বাইরে বের হতে, হাটবাজার, রেস্টেুরেন্ট-ক্যান্টিন ইত্যাদি জায়গায় যেতেও ভয় পায়।
৫. ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
৬. আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসতে পারে।
৭. সর্বোপরি এই মানুষটি তার সমস্যার কারণে পরিবার সমাজ ও জাতির বোঝা হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা:
* নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো। * রোগীকে আশ্বস্ত করা। নির্দিষ্ট সময়ান্তে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
সঠিক সময়ে সাইকিয়াট্রিষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ফলোআপের মাধ্যমে চিকিৎসা করলে এসব রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
লেখক : অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট যোগাযোগ:০১৮১৭০২৮২৭৭