ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের সমস্যা

ডা. মো. সাইদুর রহমান

প্রকাশিত: ০০:২৩, ৩০ মে ২০২৩

প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের সমস্যা

অনেকের সর্দি-কাশির কারণে হাঁচি-কাশি দিলেই তার মূত্রনালী থেকে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসে

অনেকের সর্দি-কাশির কারণে হাঁচি-কাশি দিলেই তার মূত্রনালী থেকে কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসে। এছাড়া প্রস্রাব চেপে রাখার ক্ষমতাও কমে যায়। নারী-পুরুষ যে কারও ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি হতে পারে। প্রস্রাব ঝরে পড়া মূত্রাশয় বা মূত্রনালী সংক্রান্ত রোগের লক্ষণ। ডাক্তারি ভাষায় একে ‘ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স’ (Urinary Incontinence) বলা হয়। এই সমস্যা নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে এই সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। তবে পুরুষদের থেকে নারীদের বেশি হয়। এছাড়া নরমাল ডেলিভারির পর অনেক নারী এই সমস্যায় ভোগেন
কেন হয় : মূত্রথলি সংকুচিত হতে শুরু করলে অথবা যখন সংকুচিত হওয়া উচিত তখন না হয়ে অত্যধিক প্র¯্রাবে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে প্রবল চাপে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মূত্র বেরিয়ে আসে। এছাড়াও মূত্রাশয় ও মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশি ঠিকমতো কাজ না করলেও এই সমস্যা হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়, অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি হলে কিংবা অন্য কোনো কারণে পেটের নিচের পেশিগুলো শিথিল হয়ে যেতে পারে। তখন মূত্রথলি প্র¯্রাব ঠিকমতো ধরে রাখতে পারে না। মূত্রথলি নিচে নেমে যে পেশিগুলো মূত্রনালীকে চেপে রাখতে সাহায্য করে তাদের কাজে বাধা দেয়। পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির সার্জারির পর এ সমস্যা দেখা দেয়। কোনো কারণে এই সার্জারির সময় স্নায়ু বা মূত্রনালীর চারপাশের পেশি আঘাত পেলে সেটা অকেজো হয়ে পড়তে পারে বা তার শক্তি কমে যেতে পারে। তখন মূত্রথলির উপর চাপ পড়লে প্রস্রাব আটকে রাখা যায় না।
অনেকের প্রস্রাবের পরও মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হয় না। একটু একটু করে তখন মূত্র ঝরতে থাকে। মূত্রথলির পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে বা অন্য কোনো বাধার জন্য এমন হতে পারে। মূত্রনালীকে যে পেশিগুলো চেপে বন্ধ করে রাখে সেগুলোর জোর কমে গেলে একটু একটু করে প্রস্রাব ঝরতে থাকে। মূত্রতন্ত্রের কোনো সংক্রমণ, মূত্রথলির ক্যান্সার, প্রস্টেটের সমস্যা, পারকিনসন ডিজিজ, স্ট্রোক ইত্যাদির কারণেও এ সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া কাশি দিলে, হাঁচি দিলে, জোরে হাসলে বা ভারি ওজনের জিনিস তুললেও এমনটা হয়।
চিকিৎসা ও ব্যায়াম: রোগীর রোগের তীব্রতা অনুসারে ওষুধ দেন। নিয়মিত সেবনে এ সমস্যা অনেকটাই কমে আসে। এছাড়া ফিজিওথেরাপি বা সার্জারি করেও সমস্যার সমাধান সম্ভব। কয়েক ধরনের ব্যায়ামও খুব ভালো কাজ করে। 
ব্যায়াম-১ : চেয়ারে বসে মেরুদ- সোজা রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকুন। এবার প্রস্রাব ধরে রাখার জন্য দরকারি মাংসপেশিগুলো সংকুচিত করুন। এই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থেকে সংকুচিত মাংসপেশি ছেড়ে দিন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন। এই ব্যায়ামকে বলে পেলভিক ফ্লোর মাসল। যা মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।
ব্যায়াম-২ : সোজা চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করে নিন। এবার ধীরে ধীরে কোমর ওপরের দিকে ওঠান। ৫ সেকেন্ড এভাবে ধরে রাখুন এবং ছাড়ুন। এই ব্যায়ামটিও দিনে ৪ বেলা এবং প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ বার করুন।
ব্যায়াম-৩ : কেগেল এক্সারসাইজ করার জন্য মাটিতে চিৎ হয়ে সোজাভাবে শুয়ে পড়ুন। দুটো পা ফাঁক করে রাখুন, হাত দুটি শরীরের দুই পাশে সোজা করে রাখুন। এবার শরীরের নি¤œভাগ (বুকের নিচ থেকে নিতম্ব পর্যন্ত) উপরের দিকে উঠিয়ে দিন। এভাবে ১৫ পর্যন্ত গুনুন। এ অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। হয়ে গেলে ধীরে ধীরে শরীর নিচের দিকে নামিয়ে দিন। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বার করুন।
প্রতিকার : প্রস্রাবের বেগ শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর প্রস্রাব করার অভ্যাস করা। এই ব্যায়ামটি প্রস্রাব ধরে রাখতে শেখায়। এটাকে বলে ব্লাডার ট্রেনিং। টেনশনমুক্ত থাকা। মূত্রথলির মাংসপেশি শক্তিশালী করতে ব্যায়াম করা। বেশি করে পানি পান করা। অতিরিক্ত চা, কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা। ওজন নিয়ন্ত্রণে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখতে পারেন। 

লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ৪০৭, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এভিনিউ, ফিনিক্স টাওয়ার, (৬ তলা) ঢাকা। শুক্রবার ছুটি।  প্রয়োজনে- ০১৭১৬-৪৫৩-২০৫ 
০১৯১৬-৭৩৩-৪৪৫

×