ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডব্লিউএইচএফ প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী

চিকিৎসা গবেষণায় সাহায্য করুন

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

চিকিৎসা গবেষণায় সাহায্য করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও প্রেসিডেন্ট ডা. জগত নারুলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য খাতে  চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে মৌলিক গবেষণা এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের (ডব্লিউএইচএফ) কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর মৌলিক গবেষণায় আমাদের সহায়তা করুন এবং আমাদের জনশক্তি বিকাশে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দিন। ডব্লিউএইচএফের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডা. জগৎ নরুলা শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মৌলিক গবেষণাকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নতির জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওপর গবেষণায় অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তার সরকারের আমলে কৃষি খাতে গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ দুধ, মাংস ও মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ কৃষিখাতে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে প্রধানত গবেষণা রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি সারাদেশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন শুরু করেন। কিন্তু তিনি তার কাজ শেষ করতে পারেননি কারণ ১৯৭৫ সালে তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করা হয়েছিল।
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি তার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এই পরিকল্পনাটি তৈরি করেছিলেন এবং কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে, তার সরকার আবার ক্লিনিক স্থাপন শুরু করে। এখন সারাদেশে ১৮ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে। অসচ্ছল ও দরিদ্র ডায়াবেটিক রোগীরাও বিনামূল্যে ইনসুলিন পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য ইতোমধ্যে বিভাগীয় সদরে পাঁচটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রতি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা ভাবছে। তিনি বলেন, হৃদযন্ত্র, কিডনি এবং ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে সরকারি ও বেসরকারি খাতে অনেক বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে, প্রতিটি অঞ্চলে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্য তাদের রয়েছে। বাংলাদেশ ওষুধ খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে কারণ এটি বর্তমানে জীবন রক্ষাকারী সব ওষুধ উৎপাদন করছে এবং বিদেশে রপ্তানি করছে।
সাক্ষাৎকালে ডব্লিউএইচএফের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জগৎ নরুলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের ব্যাপক প্রশংসা করেন এবং এই অগ্রগতিকে ‘চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর প্রতিভাবান চিকিৎসক রয়েছে যাদের দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমি আগামী জানুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছি এবং হৃদরোগ নিয়ে প্রথমে বাংলাদেশ, ভারত ও মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে কাজ করার লক্ষ্য রয়েছে।’ ডা. নরুলা অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে মায়েদের সচেতন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন কারণ এটি দ্রুত তৃণমূলে এর সুবিধা পৌঁছাতে সহায়তা করে। সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ, যার মধ্যে ১৭ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী হৃদরোগ।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন সভায় জানান, প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র ও অসচ্ছল হৃদরোগীদের জন্য ভাল্ব, স্টেন্ট ও পেসমেকার কিনতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ৭ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত রোগীদের হার্টে ৩০০টি ভাল্ব, ৪৫০টি স্টেন্ট এবং ২৫০টি পেসমেকার স্থাপন করা হয়েছে। অনুদানে কেনা ভাল্ব, স্টেন্ট ও পেসমেকারের মজুত প্রায় শেষের পথে জানিয়ে তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করলে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেন।  
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কার্ডিওভাসকুলার ইন্টারভেনশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুর রহমান, বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার মো. (অব) আবদুল মালিক, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অধ্যাপক চৌধুরী হাফিজ আহসান, অধ্যাপক এমজি আজম ও অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

×