ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা
দেশে মোট জনসংখ্যার ২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। শুধু তাই নয় আরও অন্তত: ২ কোটি মানুষের রয়েছে প্রি-ডায়াবেটিস। প্রি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যদি এ রোগ থেকে রক্ষা করা যায় তবে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ কোটি টাকা সঞ্চয় হবে। আর তাই এটি প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনেই এই রোগ অর্ধেক প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
রবিবার ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০২২ উপলক্ষে বিএসএমএমইউতে ডায়াবেটিস নিয়ে মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনার ও একটি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন এ ব্লক মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্দ্রাল সেমিনার সাব কমিটি। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শরীর চর্চা, খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীর চর্চার জন্য যতদ্রুত সম্ভব জিমনেসিয়াম নির্মাণ করা হবে। আমাদের জিহ্বায় যা ভাল লাগে তার অধিকাংশ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক কথায় জীবনাচার নিয়ন্ত্রণ রাখলে ডায়াবেটিস প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধও সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এনসিডি ঘটিত রোগে মানুষের কষ্ট। ডায়বেটিস, ক্যান্সার, হাইপারটেনশন, কার্ডিয়াক রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে । সবচেয়ে বড় কথা ডায়বেটিসের কারণে অনেক অঙ্গ আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে প্যানক্রিয়াস, কিডনি, চক্ষু অন্যতম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন। এসময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম, নেফ্রোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ ফজলুল সেলিম, অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী ।
এসময় দেশে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী স্ক্রিনিং ও তার চিকিৎসা সম্বন্ধে বলেন সহযোগী অধ্যাপক (ভিট্রিও রেটিনা) ডা. তারিক রেজা আলী বলেন, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী সারা বিশ্বে ২০-৭৪ বৎসর বয়সী মানুষের দৃষ্টি শক্তি হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। এই রোগের প্রকোপ ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের মধ্যে শতকরা ৩৪.৬ ভাগ। এদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের চোখে বিশেষ করে রেটিনায় কোন সমস্যা আছে কি না তা নির্ণয়ের কোন সঠিক দিকরেখা আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীকে বছরে অন্তত একবার চোখের রেটিনা পরীক্ষা করাতে হয়। একটি বিশেষ ড্রপ দিয়ে চোখের মনির আকার বড় করে এই পরীক্ষা সহজেই করা সম্ভব। বাংলদেশে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সামগ্রিক অন্ধত্বের শতকরা ২.৫ ভাগ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথীর কারণে হয়ে থাকে। এ কারণে দেশে ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের রোগ বিশেষ করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী আছে কি না তা স্ক্রীনিং করা অত্যন্ত প্রয়োজন। চোখ পরীক্ষা করা ছাড়াও রেটিনার ছবি তোলা, প্রয়োজনে অন্যান্য বিশেষায়িত পরীক্ষা যেমন ফ্লুরেসিন এঞ্জিওগ্রাফি, অপ্টিকাল কোহেরেন্স টমোগ্রাফী ইত্যাদি করা প্রয়োজন। এসবের জন্য পর্যাপ্ত স্ক্রিনিং সেন্টার ও রেফারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
এসময় হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহজাদা সেলিম বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, প্রজনন বিষয়ক নানা সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর ৮০ শতাংশ মারা যায় হার্ট অ্যাটাকে। ডায়াবেটিস না থাকলে কিডনি রোগী অনেক কমে যেতো। ডায়াবেটিসের কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। ৬১% মানুষ যারা মনে করে তাদের ডায়াবেটিস নেই, কিন্তু টেস্ট করলে দেখা যায় তাদের ডায়াবেটিসের মাত্রা এতো বেশি যে ওষুধ বা ইনসুলিন শুরু করতে হয়। ডায়াবেটিস থেকে অন্য রোগ হওয়ার কারণে খরচ আরো বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে ব্যক্তির পাশাপাশি সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যয় হয়।
সেমিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসানাত, অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন রেসপেরেটরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম।
স্বপ্না
