ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসময়ে তলপেটে ব্যথা

ডা. কল্যাণী দত্ত শিপ্রা

প্রকাশিত: ০২:১১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ০২:১৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

অসময়ে তলপেটে ব্যথা

.

‘এন্ডোমেট্রিওসিস’ বা অসময়ে তলপেটে সার্বক্ষণিক ব্যথা হলো মেয়েদের এক ধরনের অসুখ। জরায়ুর ভেতরের দিকের আবরণের নাম হলো এন্ডোমেট্রিয়াম। বয়ঃসন্ধিতে হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এই আবরণের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে প্রতিমাসে মাসিক হয় এবং রক্তের সঙ্গে জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরও ঝরে পড়ে এবং নতুন করে সৃষ্টি হয়। যখন এই মাসিক বা ঋতুস্রাব যোনিপথ দিয়ে বের হয় তখন কিছুটা রক্তস্রাব ফেলোপিয়ান টিউব দিয়ে নি¤œ উদর বা তলপেটে চলে আসে এবং তলপেটের বিভিন্ন জায়গায় এটা স্থায়ীভাবে কার্যকর অবস্থায় বিরাজ করে। পেটের ভেতরে এটা ডিম্বকোষের মধ্যেও সংস্থাপিত হতে পারে, যা একটা থলির আকার ধারণ করে। এই অবস্থায় এর নাম চকলেট সিস্ট’।
জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ যদি জরায়ুর বাইরে বাসা বাঁধে বা বর্ধিত হয় তখন তাকে ‘এন্ডোমেট্রিওসিস’ বলা হয়। ডিম্বাশয়, পেটের ভেতরের আবরণী পেরিটোনিয়াম, বিভিন্ন লিগামেন্ট, অন্ত্র, সেপ্টাম, স্কার টিস্যু বা কাটা সেলাইয়ের উপর জমতে পারে এই কোষ।
প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গসমূহ
এন্ডোমেট্রিওসিস রোগটার উপসর্গগুলো নির্ভর করে কোন জায়গায় এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুগুলো সৃষ্টি হয়েছে- তার উপর। নিচে এর কিছু সাধারণ উপসর্গ উল্লেখ করা হলো-
- ঋতুচক্রের সময় পেটে প্রচ- ব্যথা অনুভূত হয়, যাকে বলে ‘ডিস্মেনোরিয়া’।
- সঙ্গমের সময় ব্যথা অনুভূত হয়, যাকে বলে ‘ডিসস্প্যারিউনিয়া’।
- ঋতুচক্রের সময় অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর (মেনোরেজিয়া) বা দীর্ঘকালীন (মেট্রোরেজিয়া) রক্তপাত হয়।
- বন্ধ্যত্ব।
-মূত্র ত্যাগের সময় এবং মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভূত হয়।
- ঋতুচক্রের সময় এবং অন্য যে কোন সময় সহজেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া।
রোগ নির্ণয়
যদিও মাসিকের সময় ব্যথা, সহবাসে ব্যথা এবং বন্ধ্যত্ব থাকলেই বোঝা যায় এন্ডোমেট্রিওসিস হয়েছে, তবুও আধুনিক চিকিৎসাগত পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওই রোগ নির্ণয় করা অধিক যুক্তিযুক্ত। নিম্নক্ত উপায়সমূহের দ্বারা রোগটি সহজেই নির্ণয় করা যায়।
শ্রোণী অঞ্চলের আল্ট্রাসাউন্ড এবং ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড করে সহজেই এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। ল্যাপারোস্কোপি করে এবং বায়েপসি করে নির্ণীত রোগটি আরও নিশ্চিত করা যায়। ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (গজও) করে এন্ডোমেট্রিয়াল যে স্থানটিতে চকলেট সিস্টটি সৃষ্টি হয়েছে, তার অবস্থান এবং আকৃতি নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
এন্ডোমেট্রিওসিস রোগটির চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স এবং রোগের তীব্রতার উপর। উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এবং আশঙ্কাজনক লক্ষণ চোখে পড়লে উপযুক্ত সময়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যথাযোগ্য ওষুধ সেবন এবং বিধিনিষেধ মেনে চললে এ রকম একটি রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

লেখক : কনসালট্যান্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
দিব্যজ্যোতি ক্লিনিক লিঃ
২১৩, তেজকুনিপাড়া, বায়তুলফালাহ্ মসজিদ সংলগ্ন, তেজগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা।
ফোন নং-০১৭২০২৭৯১৮৫

×