
এড়িয়ে চলুন হিট-স্ট্রোক
তাপ-স্ট্রোক কি?
যদি কোন ব্যক্তি অতিরিক্ত গরমে ঘামিয়ে যান, তখন তার শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে সে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করবে। এই অবস্থাকে ‘তাপ নিঃশেষণ’ (Heat exhaustion) বলে।
এমতাবস্থায় যদি শরীর তার তাপমাত্রা সঠিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারে এবং তাপমাত্রা মারাত্মক বেশি উঠে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ‘তাপ স্ট্রোক’(Heat stroke)। কেউ কেউ এ অবস্থাকে ‘সর্দিগর্মি’ও বলে থাকেন।
সাধারণত দীর্ঘক্ষণ উষ্ণ আবহাওয়ায় কাজ করার সময়, ব্যায়াম করার সময় কিংবা রৌদ্রে হাঁটাহাঁটি করার সময় তাপস্ট্রোক ঘটে। এমন কি উষ্ণ পরিবেশে বসা অবস্থায়ও তা’ হতে পারে। যদি শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস কিংবা তদোর্ধ পৌঁছে যায়, তখন সম্ভাব্য জীবনহুমকি আশঙ্কা রয়েছে।
আলামত
১। প্রধানত শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা : তাপ (ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব)
২। মানসিক অবস্থার পরিবর্তন : উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে; ভারসাম্যহীনতা (ইধষধহপব), বিভ্রান্তি, পাকড়, প্রলাপ (ঝঢ়ববপয), কথার অস্পষ্টতা, বিরক্তি, এমনকি অচেতন।
৩। ঘামের অবস্থা : শুষ্ক গরম, ঠাণ্ডা শীতল, যা’ চোখে-মুখে (Eyes-Face) দেখা যায়।
৪। বমি বমি ভাব
৫। ধকধকানি মাথাব্যথা
৬। চামড়ার রঙ্গ লাল
৭। দ্রুত অগভীর শ্বাসপ্রশ্বাস
৮। হৃদ-স্পন্দন বেড়ে যাবে।
৯। বাহুতে ঝিন ঝিন করা (অৎস)
স্মরণে রাখার সুবিধার্থে উপরোক্ত আলামত সমূহকে ইংরেজী বর্ণ মালায় একত্রে ‘ইঊ-ঋঅঝঞ’ বলা যেতে পারে; যেমনÑ ই=ইধষধহপব (ভারসাম্য), ঊ=ঊুবং (চোখ), ঋ=ঋধপব (মুখ), অ=অৎস (বাহু), ঝ=ঝঢ়ববপয (কথা), ঞ=ঞবসঢ়বৎধঃঁৎব (তাপ)। ইহাতে এ কথাও বুঝা তাপস্ট্রোক একটি জরুরী ব্যাপার, যা তাড়াতাড়ি (ইঊ ঋঅঝঞ) ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
কারণাদি
১। উচ্চ তাপমাত্রায় অভ্যস্ত নয়
২। আদ্রতাপূর্ণ উষ্ণতায় দীর্ঘ সময় থাকা
ঝুঁকি-
১। উষ্ণ আবহাওয়া
২। কাজের তীব্রতা
৩। প্রান্তিক বয়স : শৈশব এবং বার্ধংক
৪। ওষুধ : এন্টিডিপ্রেসেন্টস, ডাইয়ুরেটিক্স, বিটাব্লকারস ইত্যাদি
৫। আকস্মিক প্রকাশ (ংঁফফবহ বীঢ়ড়ংঁৎব)
৬। অসুস্থতা : যেমন হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুস্থতা, অতি ওজন, খাদ্য-নালীর অসুস্থতা ইত্যাদি।
৭। পূর্বে তাপস্ট্রোক একবার হয়ে থাকলে আবার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রোগ নির্ণয়
১। রোগীর চেহারা
২। পূর্বের ইতিহাস
৩। আলাপচারিতা
৪। রক্ত, প্রশ্রাব ও মাংসপেশির পরীক্ষা
৫। এক্সরে ইত্যাদি
চিকিৎসা
চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য হবে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা, যাতে অতিরিক্ত দেহের আভ্যন্তরীণ তাপের প্রভাবে শরীরের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নি¤েœ কয়েকটি সম্ভাব্য উপায় আলোচনা করা হলো-
১। নিমজ্জন : সম্ভব হলে বরফ গলা ঠা-া পানিতে শরীর নিমজ্জিত করবেন। নচেৎ ব্রফ ফলা ঠাণ্ডা পানিতে তোয়ালে/গামছা দিয়ে শরীর মুঝে দেবেন।
২। বাষ্পীভূত শীতল : পানি চালিত এয়ার কুলারে শরীর ঠাণ্ডা করবেন।
৩। শীতল কম্বল এবং বরফ প্যাক : শীতল কম্বল ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। ইহা দিয়ে শরীর জড়িয়ে রাখবেন। শীতল কম্বলে কিছু বরফ টুকরা পেঁচিয়ে বিশেষ কিছু স্থানে যেমন কুঁচকি, বগল, গলা, পিঠ প্রয়োগ করবেন।
৪। পেশি শিথিলকারী ওষুধ : যদি তাপ না কমে বেঞ্জোডায়াজিপাম (সেডিল) ৫ মিলিগ্রামের একটি টেবলেট খেতে পারেন।
প্রতিরোধ
শীতল ও জলয়োজিত থাকা : অর্থাৎ ঠাণ্ডায় বা ছায়ায় থাকবেন এবং বেশি বেশি পানি পান করবেন। তার জন্য নিম্নোাক্ত পরামর্শগুলোর ব্যাপারে মনোযোগী থাকবেন।
১। পোশাক : ঢিলেঢালা ফিটিং, হালকা কাপড় পরিধান করুন।
২। তরল পদার্থ : ঘামের মাধ্যমে যে পানি ও লবণ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তা’ প্রতিস্থাপন করবেন।
৩। সময় : চেষ্টা করবেন সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা (সকল বয়সী) এবং সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময়ে রৌদ্রে না যেতে।
৪। রৌদ্র দগ্ধতা এড়িয়ে চলবেন, ছাতা ব্যবহার করুন।
তাপস্ট্রোক সম্পর্কে আমাদের দেশের জনগণ সচেতন নয়; তাই এটিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। জানতে বুঝতে পারলে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। তাহলে সহজেই তাপ স্ট্রোকের ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পাব।
সংক্ষেপে
গরম দিনে ঢিলেঢালা হালকা পোশাক পরিধান করুন এবং তরল পদার্থ যেমন পানি, শরবত, স্যুপ বেশি পান করুন। তীব্র গরম ছায়ায় বসেছেন সঙ্গে এক বোতল ঠা-া পানি পান করুন।
লেখক : হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ,
সিইও ও চিফ কনসালটেন্ট
মার্তভূমি হার্ট কেয়ার লিমিটেড।
১,১/১ রূপায়ণ তাজ, (৬ তলা), কালভার্ট রোড, নয়াপল্টন, ঢাকা।
০১৩২৪৭৩০৫১০-১৩