ছবি: সংগৃহীত
একটা সময় ছিল, যখন মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতো।
আর এখন? প্রযুক্তিই মানুষকে চালায়। বিশেষ করে মোবাইল ফোন—এই ছোট যন্ত্রটাই যেন হয়ে উঠেছে কোটি মানুষের মন নিয়ন্ত্রণের অদৃশ্য রিমোট।
আপনি কি সত্যিই ফোন ব্যবহার করছেন? নাকি ফোনটাই আপনাকে চালাচ্ছে? এই প্রশ্নটা আজ শুধু বুদ্ধিদীপ্ত নয়, জরুরি। কারণ এর উত্তরেই লুকিয়ে আছে আপনার সময়, স্বপ্ন, এমনকি ভবিষ্যৎ।
তরুণ এক শিক্ষার্থী—রাতে ঠিক করেছিল ভোরে উঠে পড়বে। কিন্তু ঘুমানোর আগে "আরেকটু রিল দেখি" বলতে বলতে ২টা বেজে যায়। সকাল আর আসে না তার কাছে। দিনের আলোয় ঘুম ভাঙে বেলা ১১টায়। শুরু হয় অপরাধবোধ আর হতাশার নতুন দিন।
এই গল্প শুধু তার নয়—এই প্রজন্মের অনেকের।
স্ক্রিনে চোখ আটকে থাকা জীবনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মনোযোগ, শৃঙ্খলা আর আত্মনির্ভরতা।
মোবাইল কেবল সময় নেয় না, মনও দখল করে। প্রযুক্তি যখন আপনার জন্য কাজ করে, তখন সেটা আশীর্বাদ।
কিন্তু যখন সেটাই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, তখন সেটি অভিশাপে পরিণত হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিটি স্ক্রল, প্রতিটি লাইক, প্রতিটি নোটিফিকেশন—সবকিছু ডিজাইন করা হয় আপনাকে আরও কিছুক্ষণ ধরে রাখার জন্য। এটাই “ডিজিটাল হুক” বা আসক্তির ফাঁদ।
মানুষ তখন নিজের মতো করে চিন্তা করতে ভুলে যায়। নিজের মনকে চালানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই মনই তো আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র—আর সেটাই যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে জীবন কোন দিকে এগোবে?
মনের শক্তির দিকে ফিরে যাওয়া—সমাধানের পথ। এখনই সময় মনের লাগাম নিজের হাতে নেওয়ার। নিজেকে প্রশ্ন করুন: আজ সারাদিন আমি কত ঘণ্টা ফোনে ছিলাম? তার ফল কী পেলাম?
একসাথে সব বন্ধ নয়। ধীরে ধীরে স্ক্রিন টাইম কমান। মনের শক্তি কল্পনার থেকেও বেশি। একে লক্ষ্যভিত্তিক কাজে লাগান—পড়ালেখা, সৃজনশীলতা, মেডিটেশন, ব্যবসায়িক চিন্তা।
সকালে ঘুম ভাঙা আর রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত ৩০ মিনিট ফোন ছাড়ুন। মনকে প্রশান্ত করুন। যেখানে আপনি ফোন ছাড়া, কেবল নিজের ভাবনা আর কাজ নিয়ে থাকবেন।
প্রযুক্তি হোক সহায়ক, শাসক নয়। আপনার জীবনের স্টিয়ারিং আপনি নিজেই ধরুন। যারা নিজের মনকে জয় করতে পারে, তারাই আসলে জীবনে সফলতা জয় করতে পারে। যত বড় স্ক্রিনই হোক, তার ওপাশে মনকে যেন না হারিয়ে ফেলেন।
একবার নিজেকে আয়নায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করুন— “আমি মোবাইল চালাচ্ছি, নাকি মোবাইল আমাকে চালাচ্ছে?”
এই এক প্রশ্নের উত্তর আপনার আগামী দিনের পথ ঠিক করে দেবে।
আবির
