ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বজ্রপাতে সচেতনতায় বাঁচাতে পারে প্রাণহানি

কাজী খলিলুর রহমান

প্রকাশিত: ১৭:১২, ২১ মে ২০২৫

বজ্রপাতে সচেতনতায় বাঁচাতে পারে প্রাণহানি

মেঘ থেকে ভূমিতে ধাবিত বজ্রপাত মানুষ ও সম্পদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রাঘাতের প্রকোপ থাকে বেশি।দেশে প্রতিবছরই বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ। যা রীতিমতো পরিণত হয়েছে আতঙ্কে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যান। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত ৭৩ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন।

সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হাওড়াঞ্চলে। তাইতো আকাশে মেঘ দেখলেই ভয় পান হাওড় পাড়ের জেলা সুনামগঞ্জের মানুষ।বৃষ্টি শুরু হলে অনেকে আশ্রয় নেন গাছ ও ছাউনির নিচে। এরপরও প্রাণহানি কমছে না।প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি শিকার শ্রমজীবী মানুষ। 

বজ্রাঘাতে গাছ ফেটে চৌচির, তালগাছে অগ্নিকাণ্ড, তুলার গোডাউন পুড়ে ছাই, কৃষকের গাভীর মৃত্যুসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।আর বজ্রাঘাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সীমান্তে টহলের সময় বিজিবির সদস্য, কৃষক, শিক্ষার্থী, জেলেসহ অন্যান্য পেশাজীবী মানুষ।আর বজ্রপাতে প্রাণ হারানোদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো কৃষক, যারা ফসল ফলান, বন্যা ও খরার ভয়কে জয় করেন, আর অপেক্ষা করেন ফসল ঘরে তোলার সময়টার জন্য। 

কিন্তু এই বহু কাঙ্ক্ষিত সময়ে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাতের শিকার হয়ে কৃষকের প্রাণ যায়, তখন তা শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা দেশের জন্যই অশনি সংকেত হয়ে ওঠে। দেশে বজ্রপাত নির্ণয় ও সতর্কতা ব্যবস্থায় কিছু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে। তবে তা অধিকাংশ কৃষকের নাগালে নেই। হাওরাঞ্চলের মতো দুর্বল নেটওয়ার্কের জায়গায় তা কার্যকরভাবে পৌঁছায় না। অধিকাংশ কৃষকই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না, ফলে তারা এসব বার্তা পান না। 

এছাড়া, বজ্রপাত প্রতিরোধক ব্যবস্থা- যেমন লাইটনিং অ্যারেস্টর-গ্রামীণ স্কুল, মসজিদ, খোলা মাঠে নির্মিত নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র বা কৃষক সমবায় অফিসে স্থাপন করা হয়নি। আবার বজ্রপাতের সময় কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, তা নিয়েও নেই কোনো ব্যাপক প্রচার বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। 

বজ্রপাত থেকে জীবন বাঁচাতে চাইলে প্রথমেই দরকার গণসচেতনতা। বজ্রপাত শুরু হলে খোলা মাঠ, বিল, নদী বা উঁচু গাছপালা থেকে দূরে থাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা, গাছের নিচে না দাঁড়ানো এবং নিরাপদ কংক্রিট ভবনে আশ্রয় নেয়া উচিত। কিন্তু এসব নিয়ম কতজন জানেন? আর যারা জানেন, তারাও অনেক সময় অবহেলা করেন জীবিকার তাগিদে। 

এই প্রেক্ষাপটে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত ভূমিকা অপরিহার্য। প্রতি উপজেলায় বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেখানে নির্দিষ্ট স্থানে লাইটনিং অ্যারেস্টর বসানো, জনগণকে এসএমএস ও লাউডস্পিকারে সতর্কতা জানানো, কৃষকদের হাতে বজ্রপাতে নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশিকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

সাব্বির

×