
গোলাপী আর সাদা পদ্ম ফুল
সবুজ-শ্যামল আর চারিদিকে সারি সারি নানা গাছ অপরুপ সৌন্দর্য্য মন্ডিত চাকির পাশা পদ্ম বিল। লেকের পদ্ম ফুল গুলির স্নিগ্ধ ঘ্রান মানুষকে বিমোহিত করবে। চারিদিকে গাছ-গাছালি,পাখি আর আবহাওয়া যে কোন মানুষকে আকৃষ্ট করে। আশে পাশের গ্রাম গুলোর মানুষ সহজ সরল।
তাদের পুরাতন ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সেই সাথে আধুনিক সমাজের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে চলার অনুপম চেষ্টা সকলের নজর কাড়ে। বিলের যেদিকে তাকাই শুধু গোলাপী আর সাদা পদ্ম ফুলের সমাহার। এই পদ্ম ফুলের শ্যামল নীলিমায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের হাজারও অপরুপ দ্যুতি। যা উপমার অতীত।
কুড়িগ্রামের চাকির পাশা বিলে গোলাপী আর সাদা পদ্ম ফুলের চোখ জুড়ানো এই দৃশ্য দেখে যে কারোই মন ভাল হয়ে যাবে। অনেকেই লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের মধ্যে মিল থাকার কারণে চিনতে ভুল করেন। কিন্তু এর বীজপত্র ভালোভাবে দেখলেই পার্থক্য বোঝা যায়। পদ্ম ফুল সাধারণত শরৎকালে ফোটে তবে বর্ষাকালেও পদ্মের দেখা পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রামের দুটি উপজেলায় এই পদ্ম ফুলের সমারোহ দেখা যায়। একটি রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের প্রায় ১শ ৩৯ একরের বিলের মধ্যে ৪০ একর জমিতে পদ্ম বিল।
চাকির পশা বিলটি পদ্মবিল নামেই পরিচিত। অপরদিকে রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নীলের কুঠি গ্রামের পাটাধোয়া বিলে প্রায় ১৫ একর জমিতে লাল পদ্ম ফুলের দেখা মেলে। দু’চোখ যতো দূরে যায়, শুধু পদ্ম আর পদ্ম। আর এ কারণে বিল দুটি পদ্মবিল নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে জেলার মানুষের কাছে।
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এই পদ্ম ফুল বাড়তি সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে এই দু’জনপদে। প্রচুর পাখি আসে এই পদ্ম বিল দুটিতে। প্রতিবছর সারা দেশ থেকে পদ্মবিলে সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন দর্শণার্থীরা। গোলাপী ও সাদা রং এর পদ্ম দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।
এমন অপরূপ দৃশ্য যেন ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দেয়। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখতে নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করেন ভ্রমণ পিপাসুরা। আর বর্ষাকালে কোনো কাজ না থাকায় পদ্ম ফুল তুলে বাড়তি আয় করেন অনেকেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুঁজো উৎসবে এই ফুলের বেশি চাহিদা পড়ে। পূজারিরা পদ্মফুল সংগ্রহ করে এ দুটি এলাকা থেকে।
আরো পড়ুন : জন্মদিনে সুখবর বয়ে এনেছে আকাশি নীল রঙের ব্যাঙ
তবে, পদ্মফুলের চাহিদা থাকলেও নেই বাণিজ্যিক চাষাবাদ। স্থানীয়রা বিল থেকে পদ্ম ফুল তুলে ১০০ টাকা হতে ১০০০টাকা পর্যন্ত আয় করে। তবে অনাদর-অযত্নে ফুটে থাকা এসব পদ্মফুল গুলো হতে পারে কৃষকদের বাড়তি আয়ের উৎস। রাজারহাট ও রৌমারী পদ্মবিলের আশে পাশের মানুষরা জানায় সরকারী ভাবে এখানে যদি পর্যটন এলাকা ঘোষণা করতো এবং পদ্ম ফুলের মধুর চাষ করার ব্যবস্থা করতো তাহলে অনেক মানুষের মধু বিক্রি করে কর্মসংস্থান হতো।
রাজার হাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, ‘চাকির পাশা পদ্ম বিলে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ আসেন। বিশেষ করে শরৎকালে যখন ফুল ফোটে। এখানে যদি একটি পর্যটন কেন্দ্র সরকার করতো তা হলে মানুষের কর্মসংস্থান হতো। তিনি এর দাববি জানান।’
পদ্ম বিলে আসার প্রধান উদ্দেশ্য বিলের অপরুপ সৌন্দর্য গোলাপী আর সাদা পদ্ম ফুল দেখা। নিবিড় শ্যামলিয়া, চোখ জুড়ানো নৈসর্গ, সবুজের সমারোহ এ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিল। পদ্ম বিলে পূর্ণিমার চাঁদনী রাতের আলো পর্যটকদেরকে বিমোহিত করে। তারা হারিয়ে যায় স্মৃতির গভীরে। মন তোলে রাঙ্গিয়ে। আর তাই প্রতিদিন শত শত মানুষ মনের আকুতি জানাতে এবং নিজেকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে মেলাতে ছুটে আসে এই পদ্ম বিল দুটিতে।