ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। ফুল ভালবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সবচেয়ে সুন্দর ফুলগুলোর কথা কি জানেন আপনি? চলুন জেনে নেয়া যাক, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কিছু ফুল নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন -মুনতাসির সিয়াম
ব্লিডিং হার্ট
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুলের মধ্যে ব্লিডিং হার্ট অন্যতম। ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভাল জন্মে এই ফুল। এর আদি নিবাস মূলত পশ্চিম আফ্রিকায়। ব্লিডিং হার্টের বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum thomsone। এটি Lamiaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এই ফুলের আরও কিছু নাম রয়েছে। এরমধ্যে Bleeding Glory Bower, Bag Flower উল্লেখযোগ্য। ব্লিডিং হার্ট সাধারণত লাল, হলুদ, সাদা এবং গোলাপি বর্ণের হয়ে থাকে। তবে গোলাপি পাপড়ি বিশিষ্ট ব্লিডিং হার্টের সৌন্দর্যই যেন বেশি মনোমুগ্ধকর। ব্লিডিং হার্ট ফুলটিকে উল্টো করে ধরলে এর আরেকটি সুন্দর রূপ ধরা পড়ে। যে সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে একে অনেকেই লেডি ইন বাথ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন।
ম্যাগনোলিয়া
শুভ্র ও মনোরম ফুল ম্যাগনোলিয়া সৌন্দর্য এবং সুগন্ধের জন্য সারা বিশ্বেই সমাদৃত। দেখতে অনেকটা পদ্ম ফুলের মতো হলেও, এটি পদ্ম নয়। ডালের ঠিক আগায় সূর্যের মতো ভোর বেলায় উদয় হয় ম্যাগনোলিয়া। তাই হয়ত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে ভালবেসে নাম দিয়েছিলেন উদয়পদ্ম বলে। মখমলের মতো মোলায়েম ৬-১২টি পাপড়ি বিশিষ্ট ম্যাগনোলিয়া দেখতে সাদা বা হালকা ঘিয়ে রঙা পিরিচাকৃতির হয়ে থাকে। যার সুগন্ধের সঙ্গে কিছুটা লেবুর গন্ধের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ম্যাগনোলিয়ার আদি নিবাস আমেরিকার ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে। শীতপ্রধান দেশে এই ফুলের গাছ ২৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে বাংলাদেশে সাধারণত ৬-১০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্টের হয়ে থাকে ম্যাগনোলিয়া ফুলের গাছগুলো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ফুলের পাপড়িগুলো ছড়িয়ে যেতে শুরু করে এবং দিনের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে ফুলটির আয়ুষ্কালও ফুরিয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জাতীয় ফুল ম্যাগনোলিয়া এবং এর গাছ মিসিসিপির জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে সমাদৃত। বাংলা ও হিন্দীতে একে হিমচাঁপা ফুল হিসেবেও ডাকা হয়।
গোলাপ
অতি সুপরিচিত একটি ফুলের নাম গোলাপ। জড়ংধপবধব পরিবারের Rosa গণের এক প্রকারের গুল্ম জাতীয় বৃক্ষে এই ফুল ফোটে। পৃথিবীতে প্রায় ১০০ প্রজাতির বিভিন্ন বর্ণের গোলাপ ফুল রেয়ছে। যার মধ্যে লাল, হলুদ, গোলাপি, সাদা, সবুজ, কালো রঙের গোলাপ বেশ উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সময়ে গার্ডেন রোজ নামে বিভিন্ন হাইব্রিড গোলাপও উৎপাদন করা হয়। যেখানে একই সঙ্গে একটি ফুলের পাপড়িতে দুই বা তারও বেশি রঙের দেখা মেলে। গোলাপের আদি নিবাস এশিয়া মহাদেশে। এর বাইরে অল্প কিছু গোলাপ প্রজাতির আদি বাস উত্তর আমেরিকা, উত্তর পশ্চিম আফ্রিকা ও ইউরোপে হলেও, সৌন্দর্য ও সুবাসের জন্য এটি সমগ্র বিশ্বজুড়েই সমাদৃত হয়। যারই ফলস্বরূপ গোলাপকে ফুলের রানী হিসেবে অভিহিত করা হয়। গোলাপের নান্দনিক পাপড়ির গড়ন ও বিন্যাস এবং এর সুঘ্রাণ মানুষকে অত্যন্ত তীব্রভাবে আকৃষ্ট করে রেখেছে সুদীর্ঘকাল যাবত।
টিউলিপ
টিউলিপ বর্ষজীবী ও বসন্তকালীন একটি ফুল। এটি মুকুল থেকে জন্মায়। অধিকাংশ টিউলিপই ডাটা থেকে একটি মাত্র মুকুলের মাধ্যমেই বিকশিত হয়। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত এই ফুলের গাছ লিলিয়াসিয়ে পরিবারের উদ্ভিদ। টিউলিপের বৈজ্ঞানিক নাম Tulipa। টিউলিপ প্রায় ১৫০টি প্রজাতিতে বিভাজ্য এবং এর অসংখ্য সংকর প্রজাতিও রয়েছে। জমকালো এবং আড়ম্বরপূর্ণ ফুলটি সাধারণত কাপ বা তারা আকৃতির হয়ে থাকে। সৌন্দর্যের জন্য এই ফুলের চাহিদা সর্বব্যাপী। তাই তো বিভিন্ন দেশে টিউলিপকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ বড় ধরনের শিল্প এবং পালিত হয় টিউলিপ উৎসবও। টিউলিপকে ইরান ও তুরস্কে ফার্সি ভাষায় লালে নামে ডাকা হয়। এই ফুলের সৌন্দর্যের প্রতি পারস্যের মানুষ এতটাই বিমোহিত যে লাল টিউলিপকে তারা ভালবাসার প্রতীক বলে মনে করেন।
চেরি
জাপানকে চেরিফুলের দেশ বলা হয়। তবে জাপানীরা নিজেদের জাতীয় ফুল হিসেবে সাকুরা বলে ডাকেন এটিকে। জাপান ছাড়াও চীন, কোরিয়া, ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ফিনল্যান্ড ও আমেরিকাসহ বেশকিছু দেশেও চেরি ফুল ফোটে। গুচ্ছবদ্ধ অনন্য সুন্দর এই ফুলগুলো প্রধানণত লাল, সাদা ও গোলাপি রঙের হয়। প্রতিবছর জাপানের আবহাওয়া অধিদফতর থেকে হিসাব করে বলে দিতে হয় যে কোন অঞ্চলে কোন সময়ে চেরিফুলের দেখা মিলবে। সেই অনুযায়ী দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন। সাধারণত বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসেই ফোটে এই ফুল। এই সময়টায় জাপানকে চেরি ফুলের স্বর্গরাজ্য বলে মনে হয়। এছাড়াও চেরি ফুলের জন্য আমেরিকার জর্জিয়া রাজ্যের ম্যাকন শহরও বেশ বিখ্যাত। এই ফুলের আয়ুষ্কাল মাত্র দুই সপ্তাহের মতো। প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে এই ফুলকে ঘিরে জাপানীরা হানামি নামক একটি উৎসব পালন করে আসছে। চেরিফুলের সৌন্দর্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে জাপানী কবি মাতসুও বাশো বলেছেন, মানুষের দুটি জীবনের মাঝে আরও একটি জীবন রয়েছে, সেটি হলো চেরিফুল ফোটার সময়।
পদ্ম
অনিন্দ্য সৌন্দর্যমন্ডিত ফুল পদ্ম প্রধানত শরতকালে ফোটে। তবে কখনও কখনও একে বর্ষাকালেও ফুটতে দেখা যায়। পদ্ম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ঘবষঁসনড় হঁপরভবৎধ। পদ্ম ছাড়াও এই ফুলের বেশকিছু নাম রয়েছে। যেমন- কমল, শতদল, ইন্দিরা, সরোজ, অম্বুজ, মৃণাল, পঙ্কজ, নলিনী প্রভৃতি। পদ্ম ফুল সাধারণত সাদা, গোলাপি বা হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। আবার ইরান ও কাশ্মীরে নীল বর্ণের পদ্মেরও দেখা মেলে। যাকে নীল কমল বা নীল পদ্ম নামে ডাকা হয়। পদ্মের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের জন্য একে জলজ ফুলের রানী হিসেবে অভিহিত করা হয়। সেইসঙ্গে এটি ভারতের জাতীয় ফুল হিসেবেও সমাদৃত। পদ্ম ফুলের শুভ্রতা মানুষের মনকে অত্যন্ত প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে রেখেছে। তাই তো একইসঙ্গে একে পবিত্রতা ও সৌন্দর্যতার প্রতীক হিসেবে মান্য করা হয়। উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ধর্মেও পদ্মকে পবিত্রতার প্রতীক বলে মনে করা হয়।