ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

লোকসঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থের প্রাক প্রকাশনা অনুষ্ঠান

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

লোকসঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থের প্রাক প্রকাশনা অনুষ্ঠান

শিল্পকলায় মঞ্চস্থ নিমাই নাটকের একটি দৃশ্য

অসীম ঐশ্বর্যে ভরপুর বাংলার লোকসঙ্গীত। আর লোকগানের সেই গৌরবগাথা এবার মলাটবন্দী হয়েছে বইয়ের ভাঁজে। আগামী ডিসেম্বর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বুবক থেকে প্রকাশিত হবে ইফতেখার আনোয়ার সম্পাদিত গ্রন্থ ফোক মেলোডি অব বাংলাদেশ। এটি লোকসঙ্গীত বিষয়ক একটি অনন্য সাধারণ এবং অভিনব প্রকাশনা। প্রায় এক দশকের গবেষণা প্রকল্পের একটি সমন্বিত প্রামাণ্যলিপি এই গ্রন্থ; যার উদ্দেশ্য হলো বাংলোদেশের লোকসঙ্গীতের ঐতিহ্যকে মূলগতভাব অনুসন্ধান ও অনুধাবন করা এবং চিরায়ত বাংলার লোকসঙ্গীতকে শুদ্ধতমরূপে নথিভুক্ত করে বৈশ্বিক পরিম-লে উপস্থাপন করা।

সোমবার সন্ধ্যায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের লা গ্যালারিতে বইটি প্রাক প্রকাশনা ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মহান গীতিকবি ও সুরস্রষ্টা রাধারমণ দত্ত, হাসন রাজা, উকিল মুন্সী, কালুশাহ ফকির, আলেপচাঁন দেওয়ান, ওসমান খান, বখত শাহ চিশতী, মেহশচন্দ্র রায়, এ.কে.এম আব্দুল আজিজসহ অনেক গীতকবির বংশধররা। আলোচনায় অংশ নেন প্রখ্যাত লালনসঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীন, বাউল আরিফ দেওয়ান, লোকগান গবেষক ও হাসন রাজার প্রপুত্র শামিরন দেওয়ান এবং উত্তরবঙ্গের সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ড. জেসমিন বুলি।
প্রন্থটি প্রসঙ্গে ইফেতখার আনোয়ার বলেন,  আমি ভেবেছিলাম এই কাজটি আমি এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করব। কিন্তু কাজটি সম্পন্ন করতে ৯ বছর পার হয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি এই বইটির মাধ্যমে বিশ্বের এই অংশের লোকগানের অনাবিষ্কৃত অমূল্য সম্পদ অনুভব করবে সারা বিশ্ব।
ইফতেখার আনোয়ার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৪ সালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক এবং সঙ্গীতানুরাগীদের সমন্বয়ে গঠিত ফোক মিউজিক প্রকল্পের যাত্রা শুরু  হয়। দলটি প্রচলিত মৌলক লোকসঙ্গীত সন্ধান, দীর্ঘদিনের হারিয়ে যাওয়া লোকসঙ্গীতের পা-ুলিপি এবং আদি গীতিকবিদের জীবিত শিষ্য অনুসারী এবং বংশধরদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে দেশের প্রতিটি উল্লেখযোগ্য অঞ্চলে অন্বেষণ ও ভ্রমণ করে। এই বইতে নথিভুক্ত প্রতিটি গানের মূল উৎস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। এর সঙ্গে বেশ কিছু গানই কয়েক দশক  থেকে কয়েক শতাব্দী ধরে শিল্পীরা গেয়ে আসছেন এবং কিছু গানেরই একাধিক ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশনার ধরন ও গায়কী প্রচলন রয়েছে।

প্রতিটি প্রজন্মই পরিবার, বন্ধু  বা  সমাজের মধ্যে তাদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় এসব গান শুনেছে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই ব-দ্বীপের মানুষের ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রকৃতি। এসব মিলে গানগুলোর সত্যিকারের উৎস সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলোদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে অনুসন্ধান করে সাক্ষাতকার নিয়ে এবং সূক্ষ্ম গবেষণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে এই বইয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি গানের প্রকৃত উৎস নিশ্চিত করা হয়েছে। বইটিতে দুইশ’ দশটির বেশি লোকগানের মৌলক সুরের স্টাফ নোটেশন ও ফোনটিকাল ট্রান্সক্রিপশন, মূল বাংলা বাণী এবং সেটার ইংরেজী অনুবাদসহ সুরকার এবং গীতিকারদের বিশদ বিবরণ সংযুক্ত করা হয়েছে।
নিখাই নাটকের মঞ্চায়ন ॥ প্রতিটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তার জন্ম ইতিহাস। পরিস্থিতির কারণে কখনও বা হারিয়ে যায় সেই পরিচয়। কখনও ধর্মের বিভেদ রেখায় হারিয়ে যায় কারও ব্যক্তিসত্তা। আবার ঘটনাচক্রে নানা সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে জন্মের অজানা অধ্যায়। ধর্মের বিভাজন পেরিয়ে আত্মপরিচয় সন্ধান বা অন্বেষণে গল্পময় তেমনই এক নাটক নিখাই। সোমবার শরতের সন্ধ্যায় থিয়েটারের প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। রচনার পাশাপাশি নিখাই নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন গাজী রাকায়েত।
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক গাজী রাকায়েত বলেন, নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ যারা করছে, তাদের ছাড়া যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে বিবেচনা করা হবে সে সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে বিবেচনা করা হবে সে পৃথিবীর সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। সেটা আমার কথা নয়, ধর্মের কথা। অথচ বর্তমানে পৃথিবীতে দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে যে দ্বন্দ্ব, সেটা এই বিভক্তিকে কেন্দ্র করেই।

এই বিভক্তি মানবজাতিকে মহাপ্রলয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু ধর্মে ধর্মে নয়, একই ধর্মের মধ্যে মানুষে মানুষে যে ব্যবধান, সেটাও ভয়াবহ! পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে মানুষের সঙ্গে মানুষের যে ব্যবধান, সেটাকে ঘোচাতে হবে- এর কোন বিকল্প নেই। সেই বৈষম্যহীনতার অবসান ঘটিয়ে মানবিকতার মাঝে মানুষের পরিচয় সন্ধানের প্রয়াস এই প্রযোজনা।
ব্রিটিশ শাসন আমলের প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত হয়েছে প্রযোজনাটির ডালপালা। একটা স্টিমার ঘাটকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়। নানা জায়গার নানা ধরনের লোকের আনাগোনা সেখানে। তাই স্থায়ীভাবে কেউই থাকে না ঘাটে। তবে এক বৃদ্ধ দশটি বছর ধরে আবাস গড়েছেন ওই ঘাটে। বলা যায় তিনিই সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা।

নিত্যদিনের মাঝে হঠাৎ একদিন মাঝরাতে এক ব্রিটিশ দারোগা সস্ত্রীক হাজির হন সেই ঘাটে। নদী পার হওয়া তাদের জন্য ভীষণ জরুরী। কিন্তু কোন মাঝি-মাল্লা না পাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় তাদের। একের পর এক ঘটতে থাকে বিচিত্র সব ঘটনা। এরই মাঝে বেরিয়ে আসে একজন মানুষের জন্মের ইতিহাস। এভাবেই এগিয়ে যায় আত্মপরিচয়-সন্ধানী নিখাই নাটকের কাহিনী।
থিয়েটারের ৩৪তম প্রযোজনাটি ৭৩তম প্রদর্শনীর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রফিকুল ইসলাম রফিক, প্রবীর দত্ত, তৌহিদুল ইসলাম বাদল ও আকেফা আলম ঐন্দ্রিলা।

×