ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কথোপকথন - এ পুরস্কার আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ॥ মিলন কান্তি দে

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

কথোপকথন - এ পুরস্কার আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ॥ মিলন কান্তি দে

.

যাত্রানট ও পালাকার মিলন কান্তি দে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের যাত্রা মঞ্চকে আলোকিত করে চলেছেন নিজের অভিনয়শৈলী ও দক্ষতা দিয়ে। ভগ্নপ্রায় যাত্রা শিল্পকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় লিপ্ত এই শিল্পী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। শিল্পী জীবনের ভাঙা-গড়া আর পুরস্কার পেতে যাওয়ার ঘোষণায় অনুভূতি প্রকাশ করলেন তার সাক্ষাৎকারে।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন, অনুভূতি কি?
জীবন সংগ্রাম বড় কঠিন। সেই কঠিনেরে ভালোবেসে প্রায় ৬০ বছর কাটিয়ে দিলাম গ্রামবাংলার সংস্কৃতি যাত্রাপালায়। কী পেলাম-না পেলাম, এই হিসাব করিনি কখনো। তবে তিল তিল করে এটা বুঝেছি, সাধনা কখনো ব্যর্থ হয় না। লক্ষ্য যদি অটুট থাকে, কাক্সিক্ষত ফল একদিন হাতে আসবেই। এই যে এবার আমি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছি, এর মূলে আছে দীর্ঘদিনের শ্রম ও কঠোর সাধনা। বাংলা একাডেমি আমাকে পুরস্কৃত করে যাত্রাশিল্পকেই যেন প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দিল। বাংলা একাডেমি পুরস্কার আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

কোন বিভাগে পুরস্কার পাচ্ছেন?
নাটকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছি। আমি অভিনয় ও পালা রচনার পাশাপাশি একাধারে সংগঠক, প্রযোজক, নির্দেশক, প্রশিক্ষক প্রভৃতি দায়িত্বও পালন করছি। একুশে পদকপ্রাপ্ত অমলেন্দু বিশ্বাসের পর আমিই এখন যাত্রাকে নিয়ে, যাত্রাশিল্পীদের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।

যাত্রায় আপনার শুরুটা কেমন?
১৯৬৬ সালে বরিশালে প্রথম পেশাদার যাত্রাদলের সঙ্গে যুক্ত হই। অভিনয়ের চাইতে যাত্রার সংস্কার ও উন্নয়নই ছিল আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। এ যাবৎ ১৫১ পালায় অভিনয় করেছি। নির্দেশনা দিয়েছি ১১৯টিতে। যাত্রাকে জাতীয় পর্যায়ে উত্তরণের লক্ষ্যে সাংবাদিকতা করেছি, এখনো পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লিখছি। অনেকে আমাকে বলে থাকেন এ দেশে যাত্রা সাংবাদিকতার পথিকৃৎ।

কিভাবে যাত্রাকে পৌঁছে দিয়েছেন তৃণমূল পর্যায়ে?
যাত্রাই পারে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে দেশপ্রেম আর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাগিয়ে রাখতে। যাত্রার সেই সম্মোহনী শক্তি রয়েছে। এই শক্তি নিয়েই এই বয়সেও আমি ছুটে বেড়াচ্ছি যাত্রার পতাকা হাতে নিয়ে।

যে কারণে এ স্বীকৃতি এলো
এ পর্যন্ত গবেষণাসসহ ১১টি বই লিখেছি। যে কাজের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছি, সেই যাত্রা বা নাটক লিখেছি ৯টি। এবার থেকে প্রতিবছর ২টি বই প্রকাশ করব। যাত্রাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি।

এর আগের পুরস্কারের কথা বলেন
যাত্রাশিল্পে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছি সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার, শিল্পকলা একাডেমির বিশেষ যাত্রাব্যক্তিত্বের পুরস্কার, ইবসেন অ্যাওয়ার্ড, অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক, নাট্যচক্র সম্মাননা ও চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে প্রত্যয় শিক্ষা সাংস্কৃতিক একাডেমির গুণীজন সম্মাননা প্রভৃতি।

আপনিতো যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি
যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম সহ-সভাপতি এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহযোগী সংগঠন জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমার মূলধন হচ্ছে সংস্কৃতি কর্মীদের অপার ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা। এই মমতা ও ভালোবাসা নিয়েই জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে চাই।

গৌতম পান্ডে

 

×