ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

কীর্তিমান দশ নারী পেলেন অনন্যা সম্মাননা

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ২০ নভেম্বর ২০২২

কীর্তিমান দশ নারী পেলেন অনন্যা সম্মাননা

আসাদুজ্জামান নূর

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর এগিয়ে যাওয়াটা খুব সহজ নয়। পরিবার থেকে সমাজ কিংবা কর্মস্থলে পেরুতে হয় অজস্র প্রতিবন্ধকতা। নারীর পরিচয়কে ছাপিয়ে সফল মানুষ হওয়ার পথে নেমে আসে প্রতিকূলতা। তবে সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা কেউ বা কর্মক্ষেত্রে অর্জন করেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। গড়ে নেন নিজের অবস্থান। আত্মোন্নয়নের মাধ্যমে হয়ে ওঠেন আইকন। তেমনই কীর্তিমান দশ নারীকে প্রদান করা হলো নারীবিষয়ক ম্যাগাজিন পাক্ষিক অনন্যা প্রবর্তিত অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা ২০২১।

মঞ্চশিল্পী থেকে আলোকচিত্র কিংবা অর্থনীতি থেকে কারুশিল্প-এমন নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তারা পেয়েছেন এই পুরস্কার। রাজধানীসহ দেশের নানা অঞ্চলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কীর্তির স্বাক্ষর রেখেছেন এই নারীরা। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
মঞ্চনাটকে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি ২০২১ সালের অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পেয়েছেন মঞ্চাভিনেত্রী ও নির্দেশক ত্রপা মজুমদার। আলোকচিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা পেয়েছেন আলোকচিত্রশিল্পী শাহরিয়ার ফারজানা। অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা পেয়েছেন অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ। করপোরেট ব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন বিটপী দাশ চৌধুরী। অদম্য সাহসী হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন শাহিনুর আক্তার।

এছাড়া সম্মাননা পেয়েছেন বিজ্ঞানী সালমা সুলতানা, প্রযুক্তিবিদ রুদমীলা নওশীন, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক সান্ত¦না রানী রায়, নারী উদ্যোক্তা মোছা. ইছমত আরা ও প্রথম ফিফা নারী রেফারি জয়া চাকমা। এই দশজনের বাইরে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন রাঙ্গামাটির ৯০ বছর বয়সী কারুশিল্পী সরত মালা চাকমা।
সম্মাননাপ্রাপ্ত হাতে সম্মাননা স্মারক ও সনদ তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে অনন্যা সম্মাননাপ্রাপ্ত নারীদের বেড়ে ওঠাসহ সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায় মেলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সারাবিশ্বে নারীরা শুধু কাজ করেই যান কিন্তু ততটা স্বীকৃতি তারা পান না। পরিবার গঠন, সমাজ বিনির্মাণ ও জাতি গঠনে একজন মা, বোন ও স্ত্রীর যে অবদান সে তুলনায় তারা সামান্যই স্বীকৃতি পান। আজ অনন্যা শীর্ষদশ জয়ী আলোকিত নারীরা আমাদের মাঝে রয়েছেন। মেধা, প্রতিভা ও শ্রমের সমন্বয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা সাফল্য অর্জন করেছেন।

জাতি গঠনে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অনেক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেই তারা গড়ে নিয়েছেন নিজস্ব অবস্থান। নারীদের এই অদম্য স্পৃহাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়েছে দেশ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আপনাদের প্রত্যেকের জীবনের ধৈর্য, অধ্যাবসায়, চ্যালেঞ্জ ও বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো দেখতে পেয়েছি প্রামাণ্যচিত্রে।
অনুভূতি প্রকাশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী শাহরিয়ার জামান বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের জীবনটা আসলে অমসৃণ। কাজের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বারংবার নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। কোথায় কোনো ছাড় পাওয়া যায় না। বরং নারী হওয়ার কারণেই আরও বেশি সংগ্রাম করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বিজ্ঞানী সালমা সুলতানা বলেন, সেই অর্থে কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পায় না। তাই অনেকেরই ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আমার নিজের বেলায়ও তেমনটা হতে পারত। আর ঝরে পড়লে আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না। এই মঞ্চে দাঁড়াতেও পারতাম না।
মঞ্চশিল্পী ত্রপা মজুমদার বলেন, যাদের সঙ্গে এই সম্মাননা পেলাম তাদের সংগ্রামী জীবনের অধ্যায় জেনে নিজেকে অযোগ্য মনে হচ্ছে। কারণ, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে।

×