
শেখ হাসিনার জন্মদিন
সবুজ ঘাসে ঢাকা প্রান্তরের মাঝে স্থাপিত স্থাপনাটি ঘিরে ছিল দর্শনার্থীদের বিশেষ কৌতূহল। রঙিন আলোর আভায় যেন ভিজছিল নৌকার আদলে গড়া স্থাপনাশিল্পটি। নন্দন মঞ্চের পাশে ভিড়ে থাকা নাওটির দুই পাশের সিঁড়ি বেয়ে উৎসাহীদের অনেকেই এপার থেকে ওপার যাচ্ছিলেন। প্রকাশ করছিলেন উচ্ছ্বাস। অনেকেই আবার নৌকার পাশে থাকা বাহারি ফুলের ভেতর থেকে দৃশ্যমান হওয়া শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিটির সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন। প্রিয় মানুষটির প্রতি ভালবাসার প্রকাশে ক্যামেরাবন্দী করছিলেন নিজেকে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গড়াতে তাদের অনেকেই ছুটে গেলেন জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। সেখানে গানের সুরে, নৃত্যের ছন্দে হৃদয় রাঙিয়ে শামিল হলেন বিশেষ দিবসটি উদ্্যাপনে। আর এভাবেই শিল্পের বর্ণিল হয়ে ওঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদ্যাপনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনটি। বুধবার দুপুর থেকেই শিল্পিত পথরেখায় দিবসটি উদ্যাপনের সূচনা হয়। সোনামণিরা রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়েছে ক্যানভাস। চিত্রশিবিরে তারা ছবি এঁকেছে বিবিধ বিষয়ে। পাশাপাশি একাডেমি জাতীয় চিত্রশালার ১নং গ্যালারিত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একাডেমি কর্তৃক সৃজিত শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। সাত দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত।
আর্ট ক্যাম্পের আগে একাডেমির মাঠে ‘সবুজের বুকে মানবতার জননী’ শীর্ষক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতির উন্মোচন করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনার সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সজ্জিত অনুষ্ঠান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। শিশু বক্তা হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পুষ্পিতা।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পর এদেশে বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করা যেত না। বিকৃত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
এমন প্রেক্ষাপটে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে নবযাত্রা শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনা। বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা হলেও সব ভয়কে জয় করে তিনি এগিয়ে গেছেন। ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠেছেন। তার সেই জেগে ওঠার সুবাদে মু্িক্তযুদ্ধের চেতনায় ফিরেছে বাংলাদেশ। ক্রমাগত উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে স্বদেশ। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সমৃদ্ধির সোপানে ধাবিত হওয়া বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে পরিণত হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে। সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা সূচকে অব্যাহত রয়েছে অগ্রগতির গতিধারা।
আলোচনার পর শুরু হয় বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেখানে শ্রোতারা শুনেছে মানবতা আর আধ্যাত্মবাদের বাণীময় বাউলের গান। উচ্চারিত হয়েছে- মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবারি/মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি ...। একাডেমির বাউল দলের পরিবেশনায় সিক্ত হয়েছে সুররসিকদের অন্তর। মানবতার জননী শীর্ষকে নৃত্য পরিবেশনা দর্শকের নয়নে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। এছাড়াও উপস্থাপিত হয় শুভেচ্ছা ভালবাসা, আমরা সুন্দরের অতন্দ্র প্রহরী ও প্রত্যয় হাতে হাতে শিরোনামের সমবেত নাচ। লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় পরিবেশনাগুলোর পরিচালনায় ছিলেন স্নাতা শাহরীন, মেহরাজ হক তুষার, জয়দ্বীপ পালিত ও সাইফুল ইসলাম ইভান।
প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা গেয়েছেন ‘ইতিহাস জানো তুমি’ ও ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের’ শিরোনামের সঙ্গীত। একাডেমির ভাওয়াইয়া দলের পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘সোনার এদেশ সোনা ফলা মাটি’ ও ‘বার মাস তের ফুল’। ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’ এবং ‘মনেরও রং লেগেছে’ শিরোনামের সঙ্গীত পরিবেশন করে একাডেমির শিশু সঙ্গীত দল। অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে আর্টক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী ৮০ শিশু-কিশোরের হাতে সনদপত্র তুলে দেয়া হয়।
‘শেখ হাসিনা : প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার ‘শেখ হাসিনা : প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মনিরুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। আলোচনায় অংশ নেন লেখক ও গবেষক কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ হাসিনাকে নিবেদিত সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন বরেণ্য বাচিকশিল্পী আহকাম উল্লাহ্। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং অন্যান্য সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি প্রকাশিত শেখ হাসিনা : প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর সংগ্রামী পথচলায় একটি জাতিকে সঠিক দিশা প্রদান করেছেন। অমানিশার অন্ধকার থেকে আলোর পথে আমাদের অভিমুখ ঠিক করেছেন। তাঁর জন্মদিনে আমাদের প্রত্যয় হোক অসাম্প্রদায়িক-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আশু বাস্তবায়ন।
মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সুনীতি, মানস ও দর্শনের সার্থক উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মৌলিক কারুকৃৎ তিনি। দেশ ও জনগণের মাঙ্গলিক অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনা সবসময় তাঁর সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন।