ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম খান
পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা হটিয়ে দেশের সম্পদের সর্বজনীন মালিকানা প্রতিষ্ঠায় দেশে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলার কথা বলেছেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, সেই সামাজিক বিপ্লব প্রতিষ্ঠায় বইয়ের ভূমিকা মুখ্য।
শনিবার দুপুরে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ চত্বরে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের দুই যুগ পূর্তিতে ঐতিহ্য বই উৎিসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, ঔপনিবেশিকশাসকরা আমাদের দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত। বাংলাদেশের ধনীরা এখন সেই কাজ করছে। বাংলাদেশ এখন ধনীদের ওপনিবেশে পরিণত হয়েছে।পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সমস্ত পৃথিবী রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এ জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার; সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এই সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে বইমুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে সে লড়াই বাংলাদেশেও অব্যাহতভাবে পরিচালনা করতে গেলে সংস্কৃতি চর্চায় গুরুত্বারোপ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে এ লড়াই চালাতে হলে সংস্কৃতির চর্চাটা খুব জরুরি। সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বইয়ের ভূমিকাই মুখ্য ভূমিকা। সেজন্য বইয়ের কাছে যেতে হবে, বাঁচার জন্য যেতে হবে। বাঁচা অর্থ মানুষের মত বাঁচা, মানুষের মনুষ্যত্বকে রক্ষা করে বাঁচা।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে সামাজিক বিপ্লবের গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের দেশে কোনো সামাজিক বিপ্লব ঘটেনি, রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটেছে। বাংলাদেশে বারবার স্বৈরশাসন এসেছে, তাদের হটিয়ে দিয়েছি। সমাজ আগের মত রয়ে গেছে। সমাজে মালিক-শ্রমিক-প্রজার প্রথা রয়ে গেছে এখনও। মানুষকে অসামাজিক করার সব চেষ্টা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে আছে। তাই সামাজিকতার জন্য সমাজে একটা বিপ্লব দরকার।
সামাজিক বিপ্লবের পথে পাড়া-মহল্লার পাঠাগারগুলোকে পুনররুজ্জীবিত করতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন দেশের এই প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক-চিন্তাবিদ। তিনি বলেন, পাঠাগারগুলোর মাধ্যমে কিশোরভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাই পাঠাগারগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে সামাজিকভাবে, সামাজিক- রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তরুণদের প্রতিভা বিকাশের কেন্দ্র হবে পাঠাগার। সামাজিক বিপ্লব সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি ছাড়া ঘটবে না। তাই পাঠাগারকে হতে হবে সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র।
বইপড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, বইয়ের মধ্যে দিয়ে মানুষ সচেতন হবে, বইয়ের মধ্যে দিয়ে মানুষ পথ খুঁজে পাবে, বইয়ের মধ্যে মানুষের হৃদয় শিক্ষিত হবে। মানুষের যে বুদ্ধি সেই বুদ্ধ সংকীর্ণ থাকবে না, স্বার্থপর থাকবে না। সেই বুদ্ধি অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত হবে না। সেই বুদ্ধি মানুষের সামগ্রিক উন্নতির জন্য চেষ্টা করবে।
মনুষ্যত্ব রক্ষায় বইয়ের ভূমিকা নিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে বিকশিত করতে সাহায্য করছে; একইসাথে হৃদয়কে শিক্ষিত করছে। যতদিন মানুষ থাকবে তত দিন বই থাকবে। বইয়ের ভেতরে সংগীতময়তা রয়েছে, তাই মানুষ যেমন গান গাইবে তেমনি বইও পড়বে। তাই আমাদের বইয়ের কাছে যেতেই হবে।
ঐতিহ্যের দুই যুগ পূর্তির অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন লেখক ওগবেষক শারমিন আহমেদ, তরুণ অনুবাদক মাহীন হক। স্বাগত বক্তব্য দেন ঐতিহ্যের প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাঈম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যের ২৪টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। ২ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ঐতিহ্য বই উৎসব চলবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের পাশে ঐতিহ্যের স্টলে মিলবে বাংলা সাহিত্যের নানা আঙ্গিকের বই। উৎসব চলাকালীন সময়ে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড়ে ঐত্যিহ থেকে প্রকাশিত বইগুলো কিনতে পারবেন পাঠকরা।
মনোয়ার/শহিদ