ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

নাট্যাঙ্গনে সংস্কারের দাবি বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীদের

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১২ আগস্ট ২০২৪

নাট্যাঙ্গনে সংস্কারের দাবি বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীদের

শিল্পকলা একাডেমির সামনে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরা

সোমবার শ্রাবণের বিকেলে  শিল্পকলা একাডেমির ফটকের সামনে সমবেত হয়েছিলেন একঝাঁক নাট্যকর্মী। সেখানে অভিনয়শিল্পী, নির্দেশক, নাট্যকার, আলোক পরিকল্পকসহ মঞ্চনাটকের কুশলীরা উপস্থিত ছিলেন। 

তবে কোনো শিল্প পরিবেশনার পরিবর্তে এদিন তারা অবতীর্ণ হয়েছিলেন নাট্যাঙ্গন সংস্কারের প্রতিবাদী ভূমিকায়।  সেই সুবাদে সকলের কণ্ঠে দেশের নাট্যসংগঠনগুলোর মোর্চা গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং পথনাটক পরিষদের সংস্কারের দাবি উচ্চারিত হয়। ফেডারেশন ও পরিষদের বর্তমান নেতৃত্ব তাদের ভূমিকার সমালোচনা করে এই দুটি সংগঠনে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুনীর্তি দায়ে পদত্যাগকারী শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এই সমাবেশে নাট্যকর্মীদের বহনকারী একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি থিয়েটারকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করা দেয়া হোক। এই সমাবেশের আয়োজন করে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ। 

সমাবেশে বক্তব্য  দেন নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার, মঞ্চশিল্পী মোমেনা চৌধুরী, কাজী  রোকসানা রুমা, অভিনেতা ও নির্দেশক বাকার বকুল, নির্দেশক ফয়েজ জহির, অভিনেতা কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা ও নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী সাইফুল ইসলাম জার্নাল, আলোক পরিকল্পক ঠান্ডু রায়হানহ অনেকে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অভিনেত্রী শাহানা সুমি। 

মোহাম্মদ আলী হায়দার বলেন, শিল্পকলা একাডেমিকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন সদ্য পদত্যাগকারী মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এক যুগেরও বেশি সময় মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ভারাক্রান্ত করেছেন শিল্পচর্চার জাতীয় প্রতিষ্ঠানটিকে। তাই পদত্যাগ করলেও তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শিল্পকলা একাডেমির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ গ্রপ থিয়েটার ফেডারেশনকেও দলীয়করণ করেছেন। এই বাস্তবতায় ফেডারেশনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।  

অন্যদিকে পথনাটক সাধারণ দর্শকের সাথে নাট্যসম্পর্ক স্থাপনের সবচাইতে কার্যকর মাধ্যম হলেও পথনাটক পরিষদ সেই স্বকীয়তাকে নষ্ট করেছে। গণমানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে ক্ষমতাশীনদের অন্যায় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে  প্রতিবাদী ভূমিকা রাখতে  ব্যর্থ হয়েছেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।  পথনাটকের মান উন্নয়নে পদক্ষেপ না নিয়ে কেবলমাত্র দিবসভিত্তিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থেকেছে পরিষদ। একপাক্ষিক নাটক প্রদর্শন করে মানুষের মধ্যে নাটক সম্পর্কে   নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করা হয়েছে। তাই পরিষদে এমন এমন নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে যারা নিয়মিত পথনাটক চর্চা করেন, গণমানুষের কথা বলবেন, যারা  কেবল নিজের ও দলের জন্য নয় শুধুই বাংলাদেশের থিয়েটারের উন্নয়নে কাজ করবেন। কোনো রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহের ভূমিকায় কাজ করেন এমন কাউকে আমরা পথনাটক পরিষদের নেতৃত্বে  দেখতে চাই না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, মঞ্চনাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলেন চলাকালে ওই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাদের ওই  লেজুড়বৃত্তির বিবৃতির বিষয়েও আমরা নিন্দা জানাই।   

বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণের পক্ষে  দেওয়া বক্তব্য শাহানা সুমি বলেন, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদকে মৌলিক রূপান্তরের পতে  যেতে হবে। সব লোভ, ক্ষমতা আর স্বজনপ্রীতির  ঊর্ধ্বে থেকে থিয়েটারকে গুরুত্ব দিতে হবে।  ফেডারেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বদলাতে হবে।  ফেডারেশন যেন কোনো স্বৈরাচারীর বশংবদ হয়ে না পড়ে  সেজন্য গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। ক্ষমতাসীনদের সাথে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে লেজুড়বৃত্তি না সর্বজনের সর্বপ্রাণের শিল্পচর্চার দিকে যেতে হবে। লিখিত বক্তব্যে থিয়েটারকর্মীদের সাত দফা দাবি তুলে ধরে বলা হয়, লিয়াকত আলী লাকির বিরুদ্ধে ওঠা সকল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম আর দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

একাডেমির অন্য যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম আর দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বদলাতে হবে। জুলাই হত্যাকান্ডে আদেশ দৈয়া, নিপীড়নে অংশ নেয়া, হত্যায় সমর্থন তৈরির পিআর করা মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। যারা ওই হত্যাকান্ডকে সমর্থন দিয়েছে তাদের  যে যে মাধ্যমে সমর্থন দিয়েছে সেই মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

 

শহিদ

×