ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ বছরে সোলস 

এনআই বুলবুল

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ৮ জুন ২০২৩

৫০ বছরে সোলস 

সোলসের ৫০ বছর পূর্তিতে মিলিত হন বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যর

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস। স্বাধীনতার পরবর্তী দেশ তখন সবদিক দিয়েই অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, শিল্প-সাহিত্য-সংগীতে ও অচলাবস্থা। সেসময় চট্টগ্রামের কয়েকজন গানপাগল তরুণ সাজিদ, জিলু, নেওয়াজ, রনি বড়ুয়া ও তাজুল মিলে গানের দল গঠন করে যাবতীয় অচলাবস্থাকে পাশ কাটাতে চাইলেন। প্রথমে ‘সুরেলা’ নামের একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন তারা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুরু করে ব্যান্ডটি। একপর্যায়ে তারা বুঝতে পারে, ধ্যানধারণা পাল্টাতে হবে, হতে হবে বৈশ্বিক। এ ভাবনা থেকেই সুরেলা ব্যান্ডকে ‘সোলস’ রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৭৩ সাল থেকে ব্যান্ডটি যাত্রা শুরু করে। এরইমধ্যে গানে গানে ৫০ বছর পার করছে এ ব্যান্ডদলটি।

গেল ৬ জুন সোলস তাদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি  আয়োজন করে। ঢাকার একটি ক্লাবে এ আনুষ্ঠানিকতা হয়। এ সময়ে সোলস ব্যান্ডের প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ৫০ বছর পূর্তিতে সোলস তাদের তিনটি লোগো উন্মেচন করে। লোগো তিনটি সবার সামনে উন্মোচন করেন সোলসের প্রাক্তন তিন সদস্য নেওয়াজ, পিলু খান ও র‌্যালি। এ সময় পাশে উপস্থিত ছিলেন ব্যান্ডের বর্তমান সদস্যরা। পার্থ বড়ুয়া জানান, তিনটি লোগো তৈরি করা হলেও এরমধ্যে শ্রোতা-দর্শকদের ভোটে একটি লোগো চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা লোগো তিনটি ব্যান্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছি।

১৫ জুন পর্যন্ত যে লোগোটি দর্শক-শ্রোতাদের সর্বাধিক রায় পাবে, সেটিই চূড়ান্ত হবে। যা ব্যবহার করা হবে ব্যান্ডের অফিসিয়াল প্যাড, কনসার্ট ব্যাকড্রপ, গান ও অ্যালবামে।’ এ আয়োজনে সোলস তাদের নতুন গান নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানায়। আগামী এক বছর প্রচুর নতুন গান তৈরি করে প্রকাশ করবে দলটি। সেই লক্ষ্যে খোঁজা হচ্ছে মানসম্পন্ন গীতিকবিতা। মূলত সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সোলস-এর অংশীদার হতে পারবেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা যে কোনো বাংলাদেশী, যারা গান লিখতে আগ্রহী। এরজন্য গান পাঠাতে হবে সোলসের ইমেল অ্যাড্রেসে। এ ব্যান্ডটি চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরে এর কার্যক্রম ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

গানের জগতে বড় তারকাদের মধ্যে আইয়ুব বাচ্চু, পিলু খান, নাসিম আলী খান, তপন চৌধুরী, নকীব খান, কুমার বিশ্বজিৎ, পান্থ-কানাই সকলেই সোলস থেকে আগত। সোলসে ব্যান্ডের প্রথম ভোকাল হিসেবে সামনে আসেন তপন চৌধুরী। পরবর্তীতে নকীব খান, তাজু ও আইয়ূব বাচ্চুও এ ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে ছিলেন। বর্তমানে সোলসের প্রাণপুরুষ পার্থ বড়ুয়া।  সোলসের প্রথম অ্যালবাম সুপার সোলসের অধিকাংশ গানের সুর দিয়েছেন নকীব। পারিবারিক কারণে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসতে হয় বলে তাকে সে সময় সোলস ছাড়তে হলো। ৫০ বছর পূর্তিতে সোলস ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নেওয়াজ বলেন, হয় না হয়নার মধ্যেও অনেক কিছু হয়।

সেটি সোলস ব্যান্ড দেখিয়ে দিয়েছে। এ ব্যান্ডে অনেকে এসেছেন অনেকে আবার চেলে গেছেন। কিন্তু ব্যান্ডটি তার জনপ্রিয়তা ধরে দীর্ঘপথ অতিক্রম করেছে। এটি একটি ব্যান্ডের জন্য ইতিহাস বলতে হয়। এ ব্যান্ড থেকে যারা বের হয়ে নতুন ব্যান্ড গঠনর করেছে তারাও শক্তিশালী হয়েই ব্যান্ড করেছেন।’ বর্তমানে সোলসের প্রাণপুরুষ পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘সংগীতপ্রেমী মানুষের ভালোবাসায় সোলস ৫০ বছর ধরে আছে। মানুষের ভালোবাসার টানে রয়ে গেছি। এখনো তরুণদের মুখর আড্ডায়, পিকনিকের আনন্দে কিংবা আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে উল্লাসের সঙ্গে নেচে নেচে নতুন প্রজন্মের গানপ্রেমীরা গেয়ে ওঠেন ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’ অথবা ‘এই মুখরিত জীবনের চলার পথে’। সোলসের গানে বাংলাদেশের আত্মার স্বর প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তাই ৫০ বছরেও ফুরায়নি তাদের গানের আবেদন। আমার পরেও হয়তো কেউ এভাবে সোলসকে নিয়ে যাবে আরও অনেকদূর।

×