ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মহাকবি কালিদাসের জীবনী অবলম্বনে

মঞ্চায়ন হলো নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ 

তাসমিম সুলতানা

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৬ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ১২:৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২২

মঞ্চায়ন হলো নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ 

‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের দৃশ্য।

মহাকবি কালিদাসের জীবনী অবলম্বনে মোহন রাকেশ এর রচনায় অলুক বসুর নির্দেশনায় এবং থিয়েটার ফ্যাক্টরি প্রযোজনায় আলোচিত নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ র মঞ্চায়ন হয়েছে।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টায় আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে' নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয় বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনের ড. নীলিমা ইব্রাহিম থিয়েটার হলে।

‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকটি হিন্দি ভাষায় রচনা করেছেন মোহন রাকেশ। এ নাটকের আখ্যান রচিত হয়েছে কবি কালিদাসকে কেন্দ্র করে। এছাড়াও এ নাটকে মল্লিকা এক অনিবার্য চরিত্র। কালিদাস আর মল্লিকার জীবনের নানা মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে এগিয়েছে নাটক।

‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকটি রচনা করেছেন মোহন রাকেশ। অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক। ‘প্রকৃতি ও প্রেম কেমন হাত ধরাধরি করে চলে, প্রেম কীভাবে শিল্প সৃষ্টির রসদ জোগান দেয়, প্রেম কত আদরে-যতনে-অপেক্ষায়-উপেক্ষায় ধ্রুবতারার মতো জীবনের আঙিনায় জেগে থাকে—এমন অনেক গহন অবগাহনের ডাক পাঠায় এ নাটক। আলোকিত হয় শিল্পীর সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের বহু জানা-অজানা দিক। এমনকি রাষ্ট্রীয় অনুগ্রহ আর চিন্তার স্বাধীনতার মতো স্পর্শকাতর প্রসঙ্গও রয়েছে নাটকটিতে। 

নাটকের বিষয়বস্তু হলো প্রকৃতি আর প্রেম যেন কবি কালিদাসের সাথে হাত ধরাধরি করে চলে। প্রকৃতির সাথে তার গভীর সম্পর্ক। প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা কবিতার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উজ্জয়িনী থেকে রাজার লোক আসে তাকে রাজকবির সম্মান দিয়ে রাজধানীতে নিয়ে যেতে। কিন্তু কালিদাস রাজসম্মানে লালায়িত নন। তিনি তার গাঁ ছেড়ে যেতে চান না। কারণ নানা রকম সুতো দিয়ে তিনি বাঁধা পড়ে আছেন গাঁয়ের সাথে, মাটির সাথে, জন্মস্থানের সাথে।

আকাশ, মেঘমালা, সবুজ মাঠ, হরিণ ছানা এসবের সাথে তার প্রাণের সম্পর্ক। তার জীবনে আরও একটা সম্পর্ক আছে, সে সম্পর্ক হলো ভাবনার। মল্লিকা তাকে ভালোবাসে। মল্লিকাকেও তিনি ভালোবাসেন, যেমন ভালোবাসেন প্রকৃতি ও তার জন্মভূমি। রাজার আমন্ত্রণে রাজধানীতে যাওয়ার জন্য কালিদাসকে অনুরোধ করেন মল্লিকা। কারণ মল্লিকা জানে গাঁয়ের লোকজন কালিদাসের কাব্য প্রতিভার মূল্য বোঝে না। এখানে থাকলে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটবে না। তাই মল্লিকা চায়, কালিদাস রাজধানীতে গিয়ে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাক।

মল্লিকার অনুরোধে কালিদাস উজ্জয়িনীতে যায়। কালিদাসের কবিখ্যাতি দিনদিন ছড়িয়ে পড়ে। রাজকন্যা প্রিয়মঞ্জুরির সাথে তার বিয়ে হয়। মাত্রগুপ্ত নাম ধারণ করে শাসনকর্তা বনে যান তিনি। কিন্তু কালিদাসের মন পড়ে থাকে তার গাঁয়ে। নিজের গাঁ-প্রকৃতি থেকে কালিদাস আত্বিকভাবে বিচ্ছিন্ন হতে পারেননি। পারেননি নিজেকে পাল্টাতে। ক্ষমতা পেলেন, খ্যাতি পেলেন কিন্তু সুখ পেলেন না। রাজধানীতে বসে কালিদাস যা লিখেছেন তা তার নিজ গাঁয়ের, প্রকৃতির সঞ্চয় থেকেই লিখেছেন।

একটা সময় এসে দেখলেন নতুন আর কিছু লিখতে পারছেন না কালিদাস। তখনই সবকিছু ছেড়েছুড়ে ফিরে আসেন নিজের গাঁয়ে, মল্লিকার কাছে। ততদিনে জল অনেকটা গড়িয়েছে। কোনোকিছুই আর আগের মত নেই। একমাত্র অবলম্বন মা অম্বিকাকে হারিয়ে মল্লিকা নিঃস্ব অসহায় হয়ে দারিদ্র্যের কষাঘাত আর সামাজিক প্রতিকূল পরিবেশে জীবন যুদ্ধে টিকে আছে মাত্র। যে মল্লিকা কালিদাসকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো বড় কবি হতে, সেই মল্লিকাও আর আগের মত নেই। এভাবেই কালিদাসের জীবনকাহিনী নাটকের সুন্দর অনবদ্য মঞ্চায়নের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য,এ নাটকে অভিনয় করেছেন সঞ্জিতা শারমীন, শামসুন নাহার, রামিজ রাজু, সুরভী রায়, হাসানুজ্জামান খান, আর কে এম মোহ্সেন, মিশাল সমাপ্ত, অলোক বসু, দীপু মাহমুদ, আশা আক্তার প্রমুখ

‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকে আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠান্ডু রায়হান। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন কামালউদ্দিন কবির। সংগীত, পোশাক ও দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা করেছেন যথাক্রমে রামিজ রাজু, মহসিনা আক্তার ও শামসুন নাহার। কোরিওগ্রাফি করেছেন আমিনুল আশরাফ।

×