ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বহুমাত্রিক আনুষ্ঠাকিতায় উদ্দীপ্ত সেলিম আল দীন জন্মোৎসব 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১৯ আগস্ট ২০২২

বহুমাত্রিক আনুষ্ঠাকিতায় উদ্দীপ্ত সেলিম আল দীন জন্মোৎসব 

সেলিম আল দীন জন্মোৎসব

তার মেধা ও মননের ফসলে বাংলা নাটক পেয়েছে স্বকীয় গতিধারা। ঔপনিবেশিক সাহিত্য ধারার বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি আবহমান বাংলার নিজস্বতাকে মেলে ধরেছেন নাটকের। বিষয়, আঙ্গিক কিংবা ভাষা নিয়ে গবেষণায়  ক্ষেত্রেও বাংলা নাটকে রেখেছেন অসামান্য অবদান।  স্বাধীনতা পরবর্তী নাট্য আন্দোলনে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বাংলা নাটকের সেই  অনন্য নাট্যকার সেলিম আল দীন।  

শেকড়সন্ধানী এই নাট্যকারের জন্মদিন ছিল বৃহস্পতিবার। দিবসটিতে নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হলো এই কীর্তিমানকে। তার প্রতি প্রকাশিত হলো নাট্যকর্মীদের অনুরাগ ও ভালোবাসা। দিবসটি উদ্যাপনে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঢাকা থিয়েটার। এদিন সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিতে নাট্যদলটির পক্ষ থেকে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। আর সন্ধ্যায় শিল্পকলাকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় সেলিম আল দীন রচিত নাটক নিমজ্জন।  

অন্যদিকে দিবসটি উদ্যাপনে  দুই দিনব্যাপী নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে নাট্যদল স্বপ্নদল। ‘বিশ^জয়ে বাঙলা নাট্য আজ এগিয়ে যায়, ঐতিহ্য-রবীন্দ্রনাথ-সেলিম আল দীন ধারায়’  ¯েøাগানে এই স্মরণের আয়োজন করা হয়। নাট্য প্রদর্শনী,  সেলিম আল দীনকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, তার প্রতিকৃতি দিয়ে শিল্পকলা একাডেমি চত্বর সজ্জা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণ শোভাযাত্রায় সাজানো হয়েছে এই স্মরণোৎসব।  

সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ঢাকা থিয়েটার প্রযোজিত  নিমজ্জন নাটকের মঞ্চায়ন হয়। সেলিম আল দীন রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। প্রদর্শনীর আগে আলাপচারিতায়  তিনি বলেন, বাংলা নাটকের এক অনিবার্য ও অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীন । রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বাংলা নাটকে নতুন আলোর দিশারী হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন এই নাট্যকার। পশ্চিমা নাট্যরীতিকে পাশ কাটিয়ে কাজ করেছেন হাজার বছরের দেশীয় ঐতিহ্য নিয়ে। বাংলা নাটকে প্রবর্তন করেছেন বর্ণনাত্মক ধারা।  নাট্যরচয়িতা পরিচয়ের বাইরে দীর্ঘ তিন যুগ ধরে নাট্যকেন্দ্রিক নানা কর্মতৎপরতা, গবেষণা, চর্চা ও সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন শিল্পের উচ্চতম শিখরে।  সেই সুবাদে নাট্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পিত পথরেখায় তার জন্মদিন উদ্যাপনের  উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা থিয়েটার।

নিমজ্জন নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়,  বিশ্ব ভ্রমণ শেষে এক আগন্তুক মৃত্যুশয্যায় শায়িত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বন্ধুর কাছে তিন নদীর  মোহনায় গড়ে ওঠা এক শহরে এসে হাজির হয়। রাজনৈতিক মতবাদের জন্য সেই শহরের ব্যাপক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটে। আগন্তুক ট্রেন থেকে  স্টেশনে নেমে একে একে দেখতে পায় এক কুলির ঝুলন্ত লাশ, অদ্ভূত দর্শক এক বৃদ্ধ, স্টিমারে হলোকাস্ট, নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসা এক রূপসী নারীকে। আরো  দেখতে পায় বরফের স্তুপের ভেতর অসংখ্য শিশুর লাশ, আট কি নয় বছরের গায়িকা এক শিশুকে ধর্ষণের পর জিভ কেটে নেয়া, কান্দাহারের মমি, মাদ্রিদের গণহত্যা, চিলির কবি নেরুদার ফিন্দেমুন্দোর  লোকগীতি, স্টেডিয়াম গ্যালারিতে প্রায় দেড় হাজার দর্শক ক্ষুরে কেটে খুন, ত্রিশ হাজার টন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টিএন্ডটির বিস্ফোরণে ষোল কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুস্তরে আগুন ধরে যাওয়াÑএই শহরটির ক্রমশ নিমজ্জনের ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়েই এগিয়ে যায় কাহিনী। প্রযোজচনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিলু চৌধুরী, আসাদুজ্জামান আমান, সিরাজুল ইসলাম, মোস্তাফা রতন, তরিকুল ইসলাম লিটন, রনি হোসাইন, নয়ন হোসাইন, সাজ্জাদ রাজীব, সাঈদ রিংকু, রফিক মোহাম্মদ, সামিউন জাহান দোলা, সাজ্জাদ রহমান প্রমুখ।

একই সন্ধ্যায় স্মরণোৎসবের অংশ হিসেবে শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় স্বপ্নদলের নাটক ‘হেলেন কেলার’।  সেলিম আল দীন উদ্ভাবিত আধুনিক বাঙলা নাট্যরীততে নির্মিত অপূর্ব কুমার কুণ্ড রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন জাহিদ রিপন।  মনোড্রামাটিতে একক অভিনয় করেছেন জুয়েনা শবনম।  অন্ধ ও বধির হওয়া সত্তেও প্রবল আত্মবিশ্বাসে সকল নেতিবাচকতার বিপরীতে ঘুরে দাঁড়ানো বিশ্বের বিস্ময় মহিয়সী নারী হেলেন  কেলারের জীবনের গল্প উঠে এসেছে প্রযোজনাটিতে।  এতে উন্মোচিত হয় পাশ্চাত্যের হেলেন কেলারের জীবনে প্রাচ্যের রবীন্দ্রনাথ তথা রবীন্দ্রদর্শনের প্রবল প্রভাবের প্রকৃত স্বরূপ। 

আজ শুক্রবার স্মরণোৎসবের দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে হলে মঞ্চস্থ হবে যুদ্ধবিরোধী নাটক ‘ত্রিংশ শতাব্দী’।  বাদল সরকারের  রচনা অবলম্বনে জাহিদ রিপনের রূপান্তর ও নির্দেশনায় নির্মিত হয়েছে নাটকটি। 


 

×