ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:২২, ১৭ মার্চ ২০২৩

শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

শাকিব খানে

চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ। দেশের কোনো শীর্ষ তারকার বিরুদ্ধে এমনসব ভয়ংকর অভিযোগ এভাবে কাগজে-কলমে এর আগে উঠে আসেনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগে উঠে এসেছে ধর্ষণ, অপেশাদার আচরণ, চুক্তিভঙ্গ, ঘোষণা ছাড়াই শূটিং বাতিলসহ নানা কর্মকা-। এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি আর্টিস্টকে প্রায়োরিটি দিতে চায়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দপ্তরে বুধবার শাকিব খানের নামে গুরুতর সব অভিযোগ দায়ের করেন নির্মাণাধীন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক। তিন পৃষ্ঠার সেই লিখিত অভিযোগে শাকিব খানের বিরুদ্ধে তুলে ধরা হয় ঢালিউড ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সব তথ্য। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন ঢালিউড অংশীজনরা। অপেক্ষায় আছেন শাকিব খানের প্রতিক্রিয়ার। আরও অপেক্ষা শিল্পী সমিতির সিদ্ধান্তের। 
বিষয়টি নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার সাংগঠনিক ভাষাতেই কথা বললেন। যদিও সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এক প্রশ্নের জবাবে নিপুণ বললেন, এই ইস্যুতে আমরা আমাদের আর্টিস্টকে প্রায়োরিটি দেব।
সমিতির সভাপতি দেশের বাইরে থাকলেও শাকিব খান কিন্তু ঢাকাতেই আছেন। যথারীতি শাকিব খান এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। যেমনটা তিনি আগেও বিবিধ অভিযোগের সময় নীরব ছিলেন। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার বললেন, যে কেউ সমিতিতে অভিযোগ দিতে পারেন। এটাও তেমনই একটি অভিযোগ। আমরা সেটা রিসিভ করেছি। আপনারা জানেন, আমাদের সভাপতি এখন দেশের বাইরে। তিনি দেশে আসলেই আমরা বিষয়টি সাংগঠনিক টেবিলে বসে পর্যালোচনা করব। আমরা শাকিব খানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করব। পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করব।

নিপুণ আক্তার জানান, পাঁচ দিনের মধ্যে সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন দেশে ফিরছেন। তিনি ফিরলেই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করবেন। তিনি আসলেই আমরা আগে আর্টিস্টের সঙ্গে কথা বলব। তিনি আমাদের একজন সুপারস্টার। আমরা তার সঙ্গে পুরো বিষয়টি আলাপ করব। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করব। মোট কথা আমরা আমাদের আর্টিস্টকে প্রায়োরিটি দেব। এরপর যিনি অভিযোগ করেছেন, তার সঙ্গেও কথা বলব। তারপর একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে।

শাকিব খানের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রযোজক রহমত উল্লাহ। সেখানে তিনি অপেশাদার আচরণ, চুক্তিভঙ্গ ও শ্লীলতাহানির মতো বিস্ফোরক সব অভিযোগ তুলেছেন খানের বিরুদ্ধে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে পূর্বচুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম।

চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সঙ্গে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেন নি।
‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির শূটিং চলাকালীন শাকিব খান দ্বারা যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার একটি তালিকা উল্লেখ করেছেন এই প্রযোজক। তা হচ্ছে-১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শূটিং বাতিল করে দিতেন। ২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে, হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন, আর তাতেই পুরো শূটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে।

এতে করে শূটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ বায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল। ৩. তিনি শূটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্য অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়ত শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শূটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।
এছাড়া আরও দুটি পয়েন্টে শাকিবের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড ও শ্লীলতাহানির মতো বিস্ফোরক অভিযোগ তোলা হয়েছে। যেখানে প্রযোজক তুলে ধরেন হোটেল কক্ষে শাকিব খানের আপত্তিকর জীবনাচরণ এবং শূটিং ইউনিটের সহকর্মীর শ্লীলতাহানির মতো বিব্রতকর ও বিস্ময়কর ঘটনা। যার সূত্র ধরে মামলাও হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।
রহমত উল্লাহর দাবি, পরবর্তীতে তিনি শাকিব খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে তিনি (শাকিব খান) আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।
এরপরই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে ঢালিউড পাড়ায়। বিষয়টি নিয়ে বিলম্ব না করেই অভিযোগকারী প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করেছেন শাকিব খান। বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে সমাধান নিয়েও আলোচনা করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। তিনি খবরটি নিশ্চিত করেছেন। খসরু বলেন, সমাধান হয়নি কিছু। তবে সমাধানের লক্ষ্যে আমরা বিকেলে বসেছি। চেষ্টা করছি সমাধানের। এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। খসরুর  দেওয়া তথ্য অনুসারে, অভিযোগকারীর সঙ্গে সমঝোতার  চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন শাকিব খান। নিজের জায়গায় এখনও অনড় রয়েছেন সেই প্রযোজক। 
উল্লেখ্য, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির পরিচালনা করছিলেন আশিকুর রহমান। এতে শাকিবের নায়িকা হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন সিবা আলী খান। তাদের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো অভিযোগের খবর প্রকাশ্যে আসেনি।
এর আগে ২০১৮ সালে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নিয়ে নির্মাতা আশিকুর রহমান ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঝামেলা দেখা দেয়। ওই সময় শাকিব খানকে নিয়ে ‘সুপারহিরো’ ছবির শূটিং করতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন নির্মাতা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগসহ আইনি নোটিস পর্যন্ত পাঠিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তাদের অভিযোগ ছিল, নির্মাতা সময়মতো ছবির কাজ শেষ করছেন না। এছাড়া ছবির টিজার বিক্রির টাকাও আত্মসাৎ করেছেন।
অন্যদিকে আশিকুর রহমান পাল্টা অভিযোগের তীর ছোড়েন প্রতিষ্ঠানটির দিকে। জানান, সিনেফেক্ট এন্টারটেইনমেন্ট নামের এই প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবিটির সব কিছু তাদের বুঝিয়ে দিয়ে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

×