
ছবি: সংগৃহীত
২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বিশ্বের ১৬টি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছে ন্যাশনাল কারিকুলাম ট্রান্সফরমেশন টাস্কফোর্স (এনসিটিভি)। তবে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষক উন্নয়ন ও শিক্ষা পরিবেশ উন্নতি ছাড়া কেবল পাঠ্যক্রম পাল্টালেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।
এ পর্যন্ত সাতবার শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় রদবদল হয় ২০১২ সালে, যখন মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে সৃজনশীল শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। যদিও এটি প্রশংসিত হলেও দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল, ফলে আন্দোলনের মুখে তা প্রত্যাহারও করতে হয়।
বর্তমানে সরকার যে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কথা ভাবছে, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নৈতিকতা, মানবিকতা ও বাস্তব জীবনের উপযোগী জ্ঞানে। এ লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, চীনসহ ১৬টি দেশের পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
*অস্ট্রেলিয়া: অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন শিখন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি। গঠনমূলক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব।
*যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র: অঞ্চলভিত্তিক স্বাধীন পাঠ্যক্রম। অনুসন্ধান-ভিত্তিক শিক্ষা।
*ফিনল্যান্ড: জীবনের বাস্তব সমস্যার সমাধানমূলক শিক্ষাদান। নীতিশিক্ষা, বিজ্ঞান ও ভাষার ওপর জোর।
*চীন: ভাষা, গণিত ও রাজনৈতিক শিক্ষা মুখ্য। দলগত কাজ, সমালোচনামূলক চিন্তা ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব দেশের মতো উন্নত আর্থসামাজিক কাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদ না থাকায় বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই ধরনের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন এবং দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তারা বলেন, “শুধু বই পাল্টালেই শিক্ষা পাল্টাবে না। ক্লাসরুম পরিবেশ, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি স্থায়ী শিক্ষানীতি থাকা জরুরি।”
শিক্ষানীতির স্থায়িত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শগত ফারাক দূর করা অপরিহার্য। এনসিটিভির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে একটি গ্রহণযোগ্য নীতির খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেন যে দলই ক্ষমতায় আসুক এই শিক্ষানীতি অক্ষুণ্ন থাকে।
সচেতন অভিভাবকরা চান, এমন শিক্ষাব্যবস্থা হোক যা নোটবই ও কোচিং নির্ভরতা কমিয়ে সত্যিকারের শেখা ও দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করবে।
উপদেষ্টা সিআর আবরার বলেন, “একবারেই সব আমূল পরিবর্তন সম্ভব না হলেও আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটা পথ তৈরি করে দিতে চাই।”
শিক্ষাবিদদের মতে, কারিকুলাম বদল নয়, বরং একটি যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষানীতির ভিত্তি রচনা করাই হবে এই উদ্যোগের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ছামিয়া