
ছবি: জনকণ্ঠ
বিশ্ববিদ্যালয়জীবন মানেই ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার চাপে দমবন্ধ অনুভূতি। অথচ এই ব্যস্ততার মাঝেই কেউ কেউ নিজেদের স্বপ্নকে রঙ দিয়ে চলেন এক অন্য মাত্রায়। ঠিক তেমনই একজন তরুণ সাব্বির আহমেদ।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী হলেও, সাব্বিরের আরেক পরিচয় রয়েছে— তিনি ক্যাম্পাসের সুপরিচিত ফটোগ্রাফার। এক হাতে বই, অন্য হাতে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলা এই তরুণ তার লেন্সে ধরে রেখেছেন শত রঙের গল্প।
মাদারীপুর সদর উপজেলার নতুন রাজারহাট গ্রামে জন্ম সাব্বিরের। তবে বাবা-মার কর্মসূত্রে শৈশব কেটেছে ঢাকাতেই। ছোটবেলা থেকেই সাব্বিরের চলাফেরায় ছিল সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া যা পরিবার কখনো দমন করেনি। হাইস্কুলে পড়ার সময় মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলা থেকে শুরু। সেই নেশাই একসময় রূপ নেয় ফটোগ্রাফির প্রতি গভীর ভালোবাসায়।
অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম হলেও নিজস্ব ক্যামেরা ছিল না। তবে এই অভাব থামাতে পারেনি তাকে। মোবাইল দিয়েই ছবি তুলে, কম্পিউটারে এডিট করে পাঠাতেন প্রতিযোগিতায়। ধীরে ধীরে এক বন্ধুর ক্যামেরা ধার নিয়ে, নিজের সঞ্চয় জমিয়ে এগিয়ে গেছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না নিয়েই ইউটিউব, অনলাইন টিউটোরিয়াল আর নিজের কৌতূহলকে হাতিয়ার করে হয়ে উঠেছেন দক্ষ একজন ফটোগ্রাফার। নবম শ্রেণিতে থাকতেই ছবি তোলার কৌশল, আলো-ছায়ার খেলা আর সৃজনশীল অ্যাঙ্গেলের প্রতি তার আগ্রহ জন্ম নেয়।
এসএসসি পাশের পর প্রথম রিমোট এডিটিংয়ের কাজ পান সাব্বির। সেখান থেকেই শুরু পেশাদার যাত্রা। আজ তার হাতে নিজস্ব ক্যামেরা, লেন্স, আর অভিজ্ঞতার এক সমৃদ্ধ ঝুলি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ছোট প্রোগ্রাম, সেমিনার, উৎসব কিংবা শিক্ষা সফর— প্রায় প্রতিটিতেই সাব্বিরের ক্যামেরার উপস্থিতি চোখে পড়ে। ফটোগ্রাফি এখন শুধুই শখ নয়, উপার্জনেরও পথ। নিজের খরচ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি সবই মেটান নিজের উপার্জনে।
সাব্বির বলেন, “গত সেমিস্টারে পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র ছয় দিন আগে পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে একটা বড় প্রজেক্ট শেষ করে ফিরেছি। ক্লান্তি ছিল না, বরং ছিল একরাশ আনন্দ।” শুরুতে পরিবার পুরোপুরি সমর্থন না করলেও এখন তার কাজের প্রতি সবার সম্মান তৈরি হয়েছে। শিক্ষক, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীরা তার পাশে থাকেন সবসময়।
তিনি আরও বলেন, “আমি চাই, আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রতিটি ছাত্র কোনো না কোনো কাজে যুক্ত থাকুক, হোক সেটা ফটোগ্রাফি, লেখালেখি বা অন্য কোনো স্কিল। জীবনে বাধা আসবেই, কিন্তু সেই বাধা পেরিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য পড়াশোনা শেষ করে একটি ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি এজেন্সি তৈরি করা। পাশাপাশি রিমোট জবের মাধ্যমে সংসার ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে চাই।”
এদিকে অসংখ্য তরুণের অনুপ্রেরণা হয়ে, ক্যামেরার চোখে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন বুনে চলেছেন সাব্বির আহমেদ। তার প্রতিটি ক্লিকে ধ্বনিত হয় জীবনের গল্প, আশার আলো আর এগিয়ে চলার সাহস।
মুমু ২