ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ইবিতে সাংবাদিকদের মারধর, ২২ ঘন্টা পর ‘রিসেট’ ফোন উদ্ধার

ইবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১৩ জুলাই ২০২৫

ইবিতে সাংবাদিকদের মারধর, ২২ ঘন্টা পর ‘রিসেট’ ফোন উদ্ধার

ছবি: জনকণ্ঠ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলায় সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যকার মারামারির ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তিন সাংবাদিককে মারধর করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে এক সাংবাদিকের ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রবিবার (১৩ জুলাই) ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এদিকে ফোন ছিনিয়ে দেওয়ার ২২ ঘন্টা পর বিকেল ৩টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ফোন উদ্ধার করে। ফোন হস্তান্তরকালে দেখা যায়, ফোন ‘রিসেট’ করে সব তথ্য উধাও করা হয়েছে। পরে সেই সাংবাদিক ফোন ফেরত নেয়নি।

এদিকে মারধরের ঘটনায় পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফতে মজলিস ও জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া। এছাড়া দেড়টায় একই দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগীরা হলেন- জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আরিফ বিল্লাহ, দৈনিক আজকালের খবরের রবিউল আলম এবং বার্তা২৪ এর নূর ই আলম। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, সাব্বির, আফসানা পারভিন তিনা, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ সোহাগ ও পান্না। একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর রহমান রিয়ন ও হৃদয়সহ ১০-১৫ জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলায় মারামারিতে জড়ান বিভাগটির সিনিয়র ও জুনিয়ররা। এ সময় মারামারির ঘটনা ভিডিও করতে গেলে আরিফ বিল্লাহর মোবাইল কেড়ে নেন আফসানা পারভিন টিনা। তখন তার উস্কানিতে বিভাগটির অন্য শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে তেড়ে এসে ওই সাংবাদিককে মারধর শুরু করেন। এ সময় আশেপাশের কয়েকজন ঠেকাতে গেলেও দফায় দফায় মারধর করা হয়। ওই সময় আরেক সাংবাদিক নূর ই আলম তা ভিডিও করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। পরবর্তীতে একইভাবে আরেক সাংবাদিক রবিউল আলমের ওপর হামলা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, ‘আমি হট্টগোলের আওয়াজ শুনে মাঠের দিকে এগিয়ে যাই। গিয়ে দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারধর করছেন। আরেক সাংবাদিক এ ঘটনা ভিডিও করতে গেলে তাকে ভিডিও ধারণে নিষেধ করা হয়। ভিডিও ধারণ করা বন্ধ না করায় তাকে মারধর করা হয়।’

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী সহ সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি প্রায় পুরো ঘটনার সময়ে সেখানে ছিলাম। আমি ওই মেয়েকে মারধর করতে দেখি নি। আমার দেখার বাইরে কিছু হয়েছে কিনা জানি না। তবে ঘটনা শেষ হওয়ার পর প্রক্টর স্যার ও সমন্বয়ক সুইট ভাই শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছিলেন। এসময় সেই মেয়ে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে সে নিজেকে অসুস্থ দাবি করলে তাকে প্রক্টর স্যারের গাড়িতে মেডিকেলে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ বলেন, ভিডিও করার সময় এক মেয়ে এসে আমার মোবাইল কেড়ে নেন। পরে ৮-১০ জন ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরেন এবং চড়, থাপ্পড়, ঘুষি মারা শুরু করে এবং ফোন কেড়ে নেয়। এর ২২ ঘন্টা পর প্রক্টর স্যার ফোন ফেরত দিতে ডাকলে ফোন চালু করে দেখি রিসেট দেওয়া হয়েছে। তাই ফেরত নেইনি। এর তদন্তপূর্বক বিচার এবং আমার ফোনের সমস্ত তথ্য ফেরতপূর্বক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

অভিযুক্ত নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়। এসময় আমি সাংবাদিক কাউকে মারিনি। অন্য অভিযুক্ত আফসানা পারভিন তিনা ও রিয়াজ মোর্শেদ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভাগের শিক্ষকরা আমাদের কাছে ফোন হস্তান্তর করেছে। ভুক্তভোগী সাংবাদিককে ফোন ফেরত দিতে গিয়ে সে (আরিফ) দেখে ফোন রিসেট দেওয়া হয়েছে। পরে সে ফোনটি রেখে যায়।

ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘ভুয়া নাটক’

এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নতুন ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করছেন, প্রক্টরের সামনে তাদের বান্ধবী সাংবাদিকরা আফসানা পারভিন তিনাকে সাংবাদিকরা মারধর করেছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাও নিয়েছেন ওই ছাত্রী। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, আমি যত সময় সেখানে ছিলাম কোনো মেয়ের উপর হামলা হতে দেখিনি।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সহ-সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রায় পুরো ঘটনার সময়ে সেখানে ছিলাম। আমি ওই মেয়েকে মারধর করতে দেখিনি। আমার দেখার বাইরে কিছু হয়েছে কিনা জানি না। তবে ঘটনা শেষ হওয়ার পর প্রক্টর স্যার ও সমন্বয়ক সুইট ভাই শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছিলেন। এসময় সেই মেয়ে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে সে নিজেকে অসুস্থ দাবি করলে তাকে প্রক্টর স্যারের গাড়িতে মেড়িকেলে পাঠানো হয়।

এদিকে ওই ছাত্রী এক সাংবাদিককে বলেন তাকে চারটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে এবং অপর এক সাংবাদিককে বলেন তিনটা স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তবে ভীন্ন মন্তব্য করেন মেডিকেলের কর্মকর্তা জিহাদ হোসেন। তিনি, ওই মেয়ের প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল। আসার পর তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। আধাঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলে তখন আরেকটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। পরে তার বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে চিকিৎসক প্রেসার চেকাপ করে একটি স্যালাইন দেয়।

অভিযুক্ত ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা প্রদানকারী ডা. শাহেদ আহমেদ বলেন, ছাত্রীর গায়ে কোন আঘাত লাগার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক অ্যাটাকের কারণে এমন হতে পারে। এদিকে মেডিকেল সেন্টারের একাধিক সূত্র জানায়, মেয়েটিকে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। আক্রান্ত না হয়েও সে আক্রান্তের অভিনয় করছে বলে মনে হচ্ছে।

এছাড়া প্রক্টরের সামনে ওই ছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।

ছাত্রসংগঠনগুলোর নিন্দা, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাফত ছাত্র মজলিস ও জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া। বিবৃতিতে তারা জড়িতদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া রোববার দুপুরে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছেন কমিউনিশেন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

আবির

×