ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা: রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বেরোবি 

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ২১ জুলাই ২০২৫

থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা: রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

গতকাল (২০ জুলাই) রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক একটি সচেতনতামূলক সেমিনার এবং ফ্রি থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন  অনুষ্ঠিত হয়।  বায়োটেডের উদ্যোগে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বেইস কেয়ার ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় এবং জেনেক্স হেলথের কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পরিচালিত থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা এবং স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। 

অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বাঁধন ইউনিট। অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম শওকত আলী। 

প্রধান অতিথি তার বক্তব্য থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং বায়োটেডের এই কর্মসূচির প্রশংসা করেন। বায়োটেড দেশের একমাত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই প্রথমবারের মতো ব্যাপক আকারে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে এবং বিনামূল্যে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় করে দিচ্ছে। 

উপাচার্য বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয়কে  একটি কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়োটেডের নির্বাহী পরিচালক ডঃ মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে সারা দেশের বিভিন্ন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা এবং ফ্রি স্ক্রীনিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রংপুরে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। 

সেমিনারে মূল বক্তা বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে করণীয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন বাংলাদেশে যেখানে ১১% থ্যালাসেমিয়া বাহক রয়েছে সেখানে শুধু রংপুর বিভাগেই থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা ২৭%। অথচ রংপুর বিভাগের মানুষ অসচেতন এবং এই বিভাগে সরকারি পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং এর কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতি চারজনে একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ায় রংপুর বিভাগে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে জোরদার কর্মসূচি শুরু করা উচিত। বক্তব্যে বলা হয় থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে এবং বাংলাদেশে একটি নীরব মহামারি চলছে। বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি থ্যালাসেমিয়া বাহক রয়েছে। এই সংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ এবং বিবাহযোগ্য নর-নারী। এদের অধিকাংশই জানেন না তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না। এই অজ্ঞতার কারণে ভবিষ্যতে তাদের সন্তানে থ্যালাসেমিয়া রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই মুহূর্তে সচেতন না হলে আগামী ১ দশকে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। তৈরি হতে পারে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় রকমের হুমকি।   

থ্যালাসেমিয়া রোগের সহজ কোনো চিকিৎসা নেই। যে সকল চিকিৎসা রয়েছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অপরদিকে, বিয়ের পূর্বে সাধারণ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্ত করা সম্ভব হলে এবং বাহক বাহকে বিয়ের সংখ্যা কমানো হলে ভবিষ্যৎ সন্তানদের মাঝে থ্যালাসিমিয়া রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেই জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা এবং প্রতিটি বিবাহযোগ্য নারী পুরুষের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্তকরণ। 

ড. সওগাত জাতীয় পর্যায়ে বৃহৎ পরিসরে সনাক্তকরণ কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে এই রোগটিকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সরকার উদ্যোগী হলে বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সাথে স্বাস্থ্যখাতে নীতি নির্ধারণে পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড়শত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
 

নোভা

×