ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘খুন করার উদ্দেশ্যে হামলা’ উল্লেখ করে মামলা ইবি প্রশাসনের

ইবি সংবাদদাতা 

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ১৪ মার্চ ২০২৩

‘খুন করার উদ্দেশ্যে হামলা’ উল্লেখ করে মামলা ইবি প্রশাসনের

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

  • সাড়ে তিন ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
  • এক অভিযুক্ত আটক, বাকিদের আটকের চেষ্টা
  • বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ক্যাম্পাসে মাইকিং

স্থানীয় বহিরাগতদের দ্বারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে শৈলকূপা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এতে অভিযুক্ত শেখপাড়ার বাসিন্দা আকাশ ও আলিমকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এজহারের আবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এজহারে ‘খুন করার উদ্দেশ্যেই হামলা’ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। ওসি বলেন, থানায় মামলা গ্রহণ হয়েছে। রাতেই অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন জাহাঙ্গীর হোসেন ঝন্টু নামে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে হামলার পরপরই তিন দফা দাবিতে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। সাড়ে তিন ঘন্টার অবরোধে দুইদিকে অন্তত ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ প্রশাসন ও ছাত্রলীগের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সাক্ষাৎ  করেন। উপাচার্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, শিক্ষার্থীদের উপর হামলা কারীর বিচার নিশ্চিত, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। এদিকে ক্যাম্পাসে বহিরতা প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ক্যাম্পাস জুড়ে মাইকিং করে ঘোষণাটি জানানো হয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে মফিজ লেকে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মেহেদি হাসান সুপ্ত, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মোহাম্মদ ইসলাম জিসাদসহ তার বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের লেক এলাকায় বসে ছিলেন। সেখানে বহিরাগত স্থানীয় দুইজন যুবক আকাশ ও আলিম তাদের বান্ধবীদের সহ ভিডিও ধারণ করে। তাদেরকে ভিডিও ডিলিট করতে বললে চড়াও হয়। এছাড়াও ভিডিও ধারণ করায় চড়-থাপ্পড় দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় ওই দুই যুবক।

পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভূক্তভোগীরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখ বাড়া বাজারে মোটর সাইকেলের তেল নিতে যান। এসময় স্থানীয় আকাশ ও আলিমসহ ৪/৫ জন তাদের ধাক্কা দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দিয়ে মারধর করেন। মারধরের ঘটনা ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন। 

এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ইবির চিকিৎসাকেন্দ্রের অফিস সহায়ক খন্দকার নাইমুল রেজা ও জেবুন নাহার জানান, একজনের হাতের কবজি ছিলে গেছে। আরেকজনের মাথায় দুই স্থানে ফুলে গেছে। তারা বলছিল, মাথা ঘুরছে বা অস্বস্তি লাগছে, এজন্য তাদের দুজনকে কুষ্টিয়া সদরে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আন্দোলনে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মৃদুল হাসান রাব্বি, ছাত্রলীগকর্মী আসিফ হোসেন শিমুল, সাইফুল ইসলাম রিয়নসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে বিক্ষোভ চলাকালীন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রক্টর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পরে নয়টায় অতিরিক্ত কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ফরহাদ হোসেন ও কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) সাব্বিরুল ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তারা সহ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দীকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় দাবিদাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানালে ১০টার দিকে অবরোধ স্থগিত করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। 

পরে শিক্ষার্থীরা উপাচর্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মৃদুল রাব্বির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে শৈলকূপা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত মামলার এজহার আবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী শেখপাড়া বাজারস্থ পেট্রোল পাম্প হতে তেল আনতে যান। ফেরার পথে ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছাইলে আসামী আকাশ ও আলিমসহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জন তাদের হাতে থাকা লোহার রড ও লাঠি দ্বারা শিক্ষার্থীদের পথ আটকিয়ে দেয়। 

কোন কিছু বলার আগেই খুন করার উদ্দেশ্যে আকাশ লোহার রড দিয়ে ছাত্র মোহাম্মদ ইসলাম জিসাদের মাথায় আঘাত করলে সে মাথা সরায়ে নেয়। ফলে রডের আঘাত তার ডান হাতে ও পায়ে লাগলে গুরুত্বর রক্তাত্ব ও জখম হয়। এদিকে অন্য অজ্ঞাত আসামিরা অপর ছাত্র মেহেদী হাসান সুপ্তকে তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাত্ব ও জখম করে। 

এ সময় আসামিরা তাদের এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি লাথি মারতে থাকে। মারামারির সংবাদ ক্যাম্পাসে পৌছালে ক্যাম্পাস হতে শতাধিক ছাত্র ঘটনা স্থলের দিকে রওনা দেয়। ফলে আসামীরা খুন-জখম করার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আহত ছাত্রদের উদ্ধার করে প্রথমে ইবি মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে তাদের অবস্থা আশংকাজনক হলে চিকিৎসক তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনায় প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় গেটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। 

এছাড়া বাজার কমিটি ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে বসে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
 

এসআর

×