
ছবি: সংগৃহীত।
এক সময় মানুষ নগদ অর্থ সিন্দুকে রাখতো, কেউ কেউ মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতো কষ্টের সঞ্চয়। আধুনিক যুগে সেই চিত্র বদলেছে—এখন সবাই ব্যাংকে টাকা রাখে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার টাকা কি সত্যিই নিরাপদ? সব ব্যাংক কি ভরসার যোগ্য?
সাম্প্রতিককালে দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে নানা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুতে প্রকাশিত ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিটম্যাপ’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ৯টি রয়েছে রেড জোনে, অর্থাৎ গুরুতর ঝুঁকিতে। ২৯টি ব্যাংক ইয়েলো জোনে এবং মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে—নিরাপদ অঞ্চলে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক—কোন ব্যাংকে টাকা রাখলে তা নিরাপদ থাকবে? ভালো ব্যাংক চেনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক নিচে তুলে ধরা হলো:
ভালো ব্যাংক চেনার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ উপায়:
১. সেবার মান ও প্রযুক্তি ব্যবহার:
ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত, তা দেখুন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ব্যাংক সাধারণত গ্রাহকবান্ধব হয়।
২. গ্রাহকের অভিযোগের হার:
অভিযোগ বেশি মানেই সেবা খারাপ। কম অভিযোগের মানে গ্রাহক সন্তুষ্ট, অর্থাৎ সেই ব্যাংকে টাকা রাখা তুলনামূলক নিরাপদ।
৩. অতিরিক্ত সুদের লোভে পা দেবেন না:
কোনো ব্যাংক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি সুদ দিলে বুঝবেন সেখানে সমস্যা আছে। প্রয়োজনের সময় হয়তো আপনি টাকা তুলতে পারবেন না।
৪. খেলাপি ঋণের হার (NPL):
ভালো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সাধারণত ৫% এর নিচে থাকে। বেশি হলে ব্যাংকের আর্থিক ঝুঁকি বেশি।
৫. অ্যাডভান্স-টু-ডিপোজিট রেশিও:
১০০ টাকার আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিচ্ছে তা দেখুন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেলে বুঝবেন সেই ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ।
৬. সংবাদমাধ্যমে ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান:
ব্যাংকের অনিয়ম, খেলাপি ঋণ ইত্যাদি নিয়ে সংবাদ পড়ুন, গুগলে সার্চ করুন। তাজা তথ্য পেতে সাহায্য করবে।
৭. শুধু রেটিং নয়, বাস্তবতা দেখুন:
অনেক দুর্বল ব্যাংকও কৌশলে ভালো রেটিং পায়। তাই রেটিংয়ের পাশাপাশি পরিসংখ্যান ও মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা দেখুন।
মনে রাখবেন:
"টাকা রাখার জায়গা বাছাই ভুল হলে আপনার সঞ্চয় বিপদে পড়তে পারে।"
সুতরাং শুধু লোভনীয় মুনাফা নয়, ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা যাচাই করে তবেই টাকা রাখুন। কারণ, আপনার কষ্টার্জিত টাকা কেবল জমানোর নয়—সুরক্ষারও বিষয়।
নুসরাত