
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। নিরাপদ বিনিয়োগের খোঁজে ছুটছে বিনিয়োগকারীরা, যার ফলস্বরূপ বিশ্ববাজারে সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে দুবাইয়ে ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়ায় প্রতি গ্রামে ৩৮২.২৫ দিরহাম, যা এ পর্যন্ত রেকর্ড সর্বোচ্চ সরকারি মূল্য। একইদিনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে সোনার দাম প্রতি আউন্সে ১.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪২৮.২৮ ডলারে। এটি ৭ মে-র পর সর্বোচ্চ। পাশাপাশি ফিউচার মার্কেটে সোনার দর প্রতি আউন্সে ১.৪ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৪৪৯.৬০ ডলারে লেনদেন হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক উত্তেজনায় বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আরও তীব্রতর হয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে সোনা নামক নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে, এক মাসের মধ্যে সোনার দাম পৌঁছেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এই উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই সোনার দাম নতুন রেকর্ড গড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের চলমান শত্রুতা বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ বাণিজ্য আলোচনা থেকে সরিয়ে এনেছে। এর ফলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন, যার প্রভাব পড়েছে সোনার দামে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিমান হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোনার দাম ৩ হাজার ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, দাম আরও বাড়তে পারে।’’
এর আগে শুক্রবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। টাইমস অফ ইসরাইল জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি পূর্বপরিকল্পিত সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, অত্যাধুনিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করাই ছিল মূল লক্ষ্য। দুই ডজনের বেশি জেটবিমানের অংশগ্রহণে এই হামলা অত্যন্ত নিখুঁত ও সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালিত হয়।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জানান, “আমাদের লক্ষ্য খুবই পরিষ্কার—ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ও সামরিক সক্ষমতা নিষ্ক্রিয় করা। যতক্ষণ না মিশন সম্পন্ন হচ্ছে, ততক্ষণ অভিযান চলবে।”
বিশ্ব রাজনীতির এমন উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি এখন সোনার বাজারে, আর এর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে মূল্যবৃদ্ধিতে।
আসিফ