
বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি)
বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর বাংলাদেশ অনেকটা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে জানান বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ (এফবিসিসিআই) মিডিয়া ও লিয়াজোঁ কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান।
তিনি জানান, স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু এলডিসি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের পর এই সুবিধাগুলো আর থাকবে না। সম্প্রতি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত বাংলাদেশে রপ্তানি সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ: চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পথ শীর্ষক প্রতিবেদনে এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫.৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
তাছাড়া এলডিসিভুক্ত হওয়ার কারণে ডব্লিউটিওর বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকারের বাণিজ্য সম্পর্কিত দিকগুলোর ওপর চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেধাস্বত্ব হিসেবে ওষুধ আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। ট্রিপস চুক্তি অনুযায়ী ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলো এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। অন্যদিকে কৃষিতে ভর্তুকি সুবিধা সীমিত করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নে প্রাধিকার থাকবে না। চ্যালেঞ্জগুলোকে মোটাদাগে তিনটি ভাগে ভাগ করে তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারানো। মেধাস্বত্ব আইন থেকে ছাড় রহিতকরণ। কৃষি, রপ্তানিসহ অন্যান্য খাতে বিভিন্ন ভর্তুকি রহিতকরণ।
এ সকল সমস্যা সমাধানের প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। কেননা, বিভিন্ন দেশের বিশেষত ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারালে তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। তাছাড়া রপ্তানি ভর্তুকি উঠিয়ে দিলে অনেক রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাবে। সামগ্রিক রপ্তানি খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল প্রায় ১৪.২৩%। কৃষি খাত বাংলাদেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% কর্মসংস্থান সরবরাহ করে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষি খাতের ওপর থেকে ভর্তুকি উঠিয়ে নিলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। এফবিসিসিআই বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ও দেশের ৪.৫ কোটি ব্যবসায়ীর অভিভাবক হিসাবে কাজ করে। বিগত দিনের থেকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট পরবর্তী বাংলাদেশ অর্থনীতি আরও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবে। বিগত ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থপাচার ও দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ খাদের কিনারায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এবং বিভিন্ন ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিতভাবে কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে, বিশেষত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বৈদেশিক দেনা ছিল প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা টাকা। এখন তা নেমে ১০ হাজার কোটি টাকায় এসেছে। অর্থাৎ দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার।