ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা আসছে বাজেট ২০২৫-২৬

সরকারি চাকরিজীবীদের ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়া হতে পারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৫, ১৫ মে ২০২৫

সরকারি চাকরিজীবীদের ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়া হতে পারে

সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘভাতা

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘভাতার ঘোষণা আসতে পারে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে চালু হওয়া ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা ভাতা বাতিল করে, তার পরিবর্তে এই মহার্ঘভাতা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এই ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি চালু হলে চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। কয়েক বছর ধরেই সরকারি চাকরিজীবীরা মহার্ঘভাতা চালু করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মহার্ঘভাতার চূড়ান্ত হার নির্ধারণে আগামী ২০ মে  মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করতে অর্থ বিভাগের ভেতরে কাজ চলছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান সম্প্রতি জানান, এই বিষয়ে এখনই কিছু বলার মতো সময় আসেনি।

তবে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে আগামী সপ্তাহে একটি বৈঠক হবে, যেখানে তিনিই জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত কমিটির প্রধান হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। আশা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকে এ বিষয়ে কিছু নতুন খবর পাওয়া যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মতি পেলে এই মহার্ঘভাতার সিদ্ধান্ত বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, ১ থেকে ৯ নম্বর গ্রেডের কর্মীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং বাকি সব গ্রেডের জন্য ২০ শতাংশ হারে ভাতা চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। তবে ১ থেকে ৯ গ্রেডের ভাতা ১৫ শতাংশে বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারি কর্মচারীদের ওপর ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে গত ডিসেম্বরে একটি কমিটি গঠিত হয়।

সেখানে ১০ থেকে ২০ নম্বর গ্রেডের কর্মীদের জন্য ২০ শতাংশ এবং ১ থেকে ৯ নম্বর গ্রেডের কর্মীদের জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়ার প্রস্তাব আসে। এ কমিটি একাধিকবার বৈঠক করে। তাতে জনপ্রশাসন সচিব চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনায় আপত্তি তোলেন সরকারের একাধিক উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ কিছু অর্থনীতিবিদ। তারা কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। এরপর সরকার জানুয়ারিতে ভাতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। সে সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, এ বিষয়ে তখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কমিটি গঠনের পরও ভাতা চালু না করায় প্রশাসনের ভেতরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এই অসন্তোষ বেশি, যা সরকারের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে সরকার মহার্ঘভাতা বা অন্য কোনো উপায়ে আসন্ন বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বাড়ানোর চিন্তা করছে বলে জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে একাধিকবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এসব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন।

×