
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমছে
দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমছেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণ প্রবাহে দেখা দিয়েছে মারাত্মক স্থবিরতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, এ সময়ে ব্যাংকের ঋণ প্রবাহ বেড়েছে মাত্র ২.৬৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের (৫.৫৩ শতাংশ) তুলনায় প্রায় অর্ধেক এবং গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০২৪ সালের জুন মাসের শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণ ছিল ১৬.৪১ লাখ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ১৬.৮৪ লাখ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতা ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্থিতিশীলতা না থাকলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারান।
এদিকে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের নিম্নমুখী এই ধারা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তা আরও কমেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, বিনিয়োগ মানেই অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য, বিনিয়োগ মানেই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। আর বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ।
সব মিলিয়ে বিনিয়োগ যে কোনো দেশের অর্থনীতিকে দেয় স্বস্তি। এ প্রসঙ্গে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘উচ্চ সুদ বিনিয়োগকে নিরৎসাহিত করছে, খেলাপি ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে এবং প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হচ্ছে।’ তার মতে, কঠোর মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও বেসরকারি খাতে সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো ঝুঁকছে নিরাপদ মুনাফার পথে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে, যেখানে সুদের হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার আগ্রহ কমেছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ পরিবেশের দুর্বলতাও ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট আমদানি ৫.৩৩ শতাংশ বেড়েছে, তবে একই সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৬.০২ শতাংশ। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতেও একই চিত্র। মার্চ পর্যন্ত এলসি খোলার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পেট্রোলিয়াম, ইন্টারমিডিয়েট গুডস ও মেশিনারিজ আমদানিতে এলসি কমেছে যথাক্রমে ৩.৮৩, ১.৬১ ও ২৬ শতাংশ।