ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দেশী কোম্পানি আনসার এনার্জি তৈরি করছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দ্বিতীয় যুগে নয়া বিপ্লব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দ্বিতীয় যুগে নয়া বিপ্লব

কৃষি যান্ত্রিকীকরণ

যান্ত্রিকীকরণের দ্বিতীয় যুগে কৃষি অর্থনীতিতে আসতে চলেছে অভাবনীয় বিপ্লব, তারই প্রেক্ষাপট তৈরি করে ফেলেছে এক দেশী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আনসার এনার্জি। কৃষি যন্ত্রশিল্পে তুলনামূলকভাবে নবীন এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কৃষকের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে দেশে তৈরি কম্বাইন্ড হারভেস্টার। বিশ্বমানের এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার সরকারের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পেও  রাখতে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বাংলাদেশ সরকার সেই ২০১০ সাল থেকে কৃষি শ্রমিকের সংকট নিরসনে, উৎপাদন বৃদ্ধিতে খরচ কমানোর নিমিত্তে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে। সরকার সর্বশেষ ২০২০ সালে বছর মেয়াদি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে। ৩০২০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্প ইতমধ্যে ৩৫,০০০ যন্ত্র কৃষকের হাতে ৫০ হতে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে পৌঁছে দিয়েছে যার মধ্যে ৮৫০০ কম্বাইন্ড হারভেস্টার। নয়-দশটি দেশী কোম্পানি দূর প্রাচ্যের দেশ হতে আমদানি করে বেশিরভাগ কম্বাইন্ড হারভেস্টার এই প্রকল্প এলাকার কৃষকের মাঝে প্রদান করেছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহারে সব থেকে বেশি গতিবেগ এসেছে শেষ তিন বছরে। সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সমীক্ষায় প্রকাশ আমন বোরো মৌসুম মিলিয়ে প্রায় ১৭ ভাগ ধান যন্ত্র দিয়ে সংগ্রহের আওতায় এসেছে যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা মাত্র শতাংশ ছিল। আইএমইডি প্রতিবেদন মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটার ফলে দেশের কৃষকদের প্রায় হাজার শত ১৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টারের রকম চাহিদা  বৃদ্ধির সময়ে আনসার এনার্জি ২০২২ সাল থেকে দেশে তৈরি হারভেস্টার প্রকল্পে প্রদান করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুনায়েদ ইয়াসিন বলেন, ২০১৩ সাল হতে জামালপুরে তাদের ফাক্টরিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২১ সালে এসে আমরা সফলতা পাই।

৩৬ থেকে ৩৮ টি বিভিন্ন যন্ত্রের সমন্বয় হলো কম্বাইন্ড হারভেস্টার। আমরা ৬টি কম্পনেন্ট চীন তাইওয়ান হতে আমদানি করছি, যার মধ্যে হাইড্রোলিক সিলিন্ডার, রাবার ট্র্যাক, হাইড্রোলিক পাম্প, ব্লেড, এয়ার কুলার অন্যতম। ইঞ্জিন এখান থেকেই সোর্সিং করছি। আমরা ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৭৫ হর্স পাওয়ারের কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিচ্ছি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময় হতে মেটাল অন্যান্য যন্ত্রাংশের মূল্য প্রায় ৭০-৮০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে উৎপাদন খরচ ৩০ লাখ ছুঁইছুঁই, সরকারের উচিত যন্ত্রাংশ আমদানি খরচউৎপাদন খরচের সাথে মিলিয়ে ন্যায্য দাম প্রদান করা। আমাদের প্রায় ১০ কোটি টাকা লগ্নি হয়ে গেছে এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার ফ্যাক্টরিতে। বাজারে চাহিদা থাকলে আমরা ১০০টি হারভেস্টার বছরে দিতে পারব আশা করি। জুনায়েদ বলেন, তার কোম্পানি পর্যন্ত ২০টি হারভেস্টার সরকারি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে প্রদান করেছে। আরও সুখবর হলো ৯টি বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ,২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে প্রস্তাব দিয়ে, সংস্থাটির সম্মতির পর রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)- এর কাছে শাখা পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। আরজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, চারটি চীনা কোম্পানি যথাক্রমে ৭০০ কোটি টাকা; ,২০০ কোটি টাকা; ,০০০ কোটি টাকা এবং ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। জাপানের দুটি কোম্পানি ৮০০ কোটি টাকা এবং ৩৫০ কোটি টাকা এবং দুই কোরিয়ান কোম্পানি ৫৫০ কোটি ৬৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়।

এছাড়া, তাইওয়ানের একটি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায় ৪০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারিজ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ শেখ বলেন, যে হারে সব জায়গায় কৃষি শ্রমিকের সংকট, আগামীতে কম্বাইন্ড হারভেস্টারের বাজার বাড়বে হু হু করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্র শিল্প মূলত বগুড়াকেন্দ্রিক। এখানে ১০০০ উদ্যোক্তা  ২০০০ এর ওপর পদের যন্ত্র তৈরি  করে যা দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করে। কিন্তু কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মতো জটিল যন্ত্র উৎপাদনের জন্যে দরকার বড় বিনিয়োগ। সরকারের কৃষি লোনের নীতিমালায় রকম ভারি  কৃষি শিল্পের জন্যে সহজ লোনের ব্যবস্থা করা জরুরি তার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রাংশ আমদানিতেও দিতে হবে প্রয়োজনীয় ছাড়। তাহলে বগুড়ায় বিশ্বমানের কম্বাইন্ড হারভেস্টার তৈরি করা খুবই সহজ হবে।

×