ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে গভর্নরের বৈঠক

টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং মূল্যস্ফীতিতে নাকাল দেশবাসী

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং মূল্যস্ফীতিতে নাকাল দেশবাসী। এই মূল্যস্ফীতিতে নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। নতুনভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সম্প্রতি দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পরামর্শের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই অর্থনৈতিক উপদেষ্টার সঙ্গে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বৈঠক করেন। বৈঠকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে তিনি এ পরামর্শ দেন তিনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
মেজবাউল হক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরশনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। তাই আমরা অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেসব পরামর্শ আসবে সে অনুযায়ী আগামী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হবে। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশও তার মাশুল গুনছে। বৃহস্পতিবার ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বর্তমান মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মুখপাত্র বলেন, আমরা সংকটের মধ্যে আছি তা সত্য। আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স সংগ্রহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়ে আমরা সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আরও অর্থনীতিবিদ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, চেম্বার অব কমার্স এবং অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।
গত জুন ও জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমার পর আগস্ট মাসে তা আবার বেড়েছে। গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। এই সময় দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে।
গভর্নরের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক ॥ এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়াতে ব্যাংক, রাজস্ব ও পুঁজিবাজারের মোট ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাবের পাশাপাশি নতুন করে অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী মডেল প্রস্তুত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। দাতা সংস্থাটির ঢাকায় সফররত কারিগরি সহায়তা (টিএ) দল জানায় নতুন মডেলের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট নিরসন হবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আসেব। যার ফলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে ও নতুন গতি লাভ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আইএমএফের প্রতিনিধি দলের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন যে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এমন প্রস্তাব বাস্তবায়নে সকল সহযোগিতা করা হবে। 
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী মডেল প্রস্তুত প্রস্তাব করে আইএমএফের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে ‘ইকোনমিক মডেল ফরকাস্টিং’ শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আইএমএফের কারিগরি কমিটির সঙ্গে বৈঠক অর্থনৈতিক ফরকাস্টিং মডেলসহ বিভিন্ন আলোচনা হয়। গভর্নর তাদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।’ 
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র থেকে জানা গেছে, আইএমএফের উদ্দেশ্য হলো সম্ভাব্য এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি, এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি প্রোগ্রাম এবং নতুন তৈরি রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) অধীনে ভবিষ্যতে কীভাবে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যায়। বিষয়ে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী মডেলের মাধ্যমে সতর্কতামূলক নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমিয়ে আনবে এবং অর্থনীতিকে বেগবান করবে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতি টেকসই হবে এবং সংকট দলীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’ 
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নীতি সুদহারের করিডর প্রথা, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার ও রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়নসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তা আগে গত বছরের জুলাই মাসে সংস্থাটির কাছে ঋণের আবেদন করে সরকার। ঋণের শর্ত হিসাবে সংস্থাটির পক্ষে থেকে ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসব দাবি ধাপে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদ দেওয়া হয়। যার প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করে গত ফেব্রুয়ারিতে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ নভেম্বর মাসে মিলতে পারে।

×