ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আলো দেখাচ্ছে রেমিট্যান্স

সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ২৬ মার্চ ২০২৩

আলো দেখাচ্ছে রেমিট্যান্স

রেমিট্যান্স এবং বিদেশী বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

রেমিট্যান্স এবং বিদেশী বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তাদের উন্নতির পেছনে অন্যতম কারণ বিদেশী বিনিয়োগ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ একে অন্যের পরিপূরক। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স। প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স একটা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপিও বৃদ্ধি পায়। প্রবাসী আয়ের অর্থ দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে।
করোনা কালের পর প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স আলো দেখিয়েছে। এ বছরের শুরুতেই ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে প্রবাসী আয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার অংক প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে জানুয়ারিতে ২৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার বেশি এসেছে রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত) ৭ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ে ৫০ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।

জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের অংক ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

বৈশ্বিক উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ডলার সংকটের মধ্যে প্রবাসীদের আয়ও কমে যাওয়ায় গত অর্থবছর থেকেই বৈদেশিক লেনদেনে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছর নেতিবাচক প্রবণতায় শেষ হয়। আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছিল। তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতেই ইতিবাচক ধারায় ফেরে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বৈধ উপায়ে পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, অনিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা ও রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে। সামনে অবশ্য বৈশাখ ও দুই ঈদের মতো উৎসব আছে এ সময়ে আশা করা যায় অন্য বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে। কারন উৎসবে প্রবাসী আয় বেশি আসে।

অন্যান্য সময়ের মতো এবারও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। জানুয়ারিতে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ৪২ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

×