ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি

টাকা ফেরত অসম্ভব :  চেয়ারম্যান

অনলাইন রিপোর্টার 

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১ জুলাই ২০২২

টাকা ফেরত অসম্ভব :  চেয়ারম্যান

ইভ্যালির কার্যালয়ে  সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান বিচারপতি মানিক

-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই দুটি ওয়্যার হাউজে সর্বসাকুল্যে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে অ্যামাজন কোনো সহযোগিতা করেনি পাসওয়ার্ড না পাওয়ায় ইভ্যালির সার্ভারে ঢোকাও যাচ্ছে না অবস্থায় বিনিয়োগকারী আনতে না পারলে পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ অসম্ভব

শুক্রবার ( জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান উচ্চ আদালত কর্তৃক গঠিত ইভ্যালির বর্তমান নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

তিনি বলেন, ইভ্যালির দুই ধরনের পাওনাদার রয়েছে যারা সাপ্লাইয়ার আর যারা ক্লায়েন্ট এখানে সাপ্লায়ারদের পাওনা বেশি বর্তমানে ইভ্যালির যে সম্পদ রয়েছে তাতে পাওনাদারদের সন্তুষ্ট করা অসম্ভব

ঢাকার সাভারে ইভ্যালির দুটি ওয়্যার হাউজে সর্বসাকুল্যে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে এছাড়া নয়টা ছোট পুরাতন কাভার্ডভ্যান ৫টা গাড়ি পেয়েছি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই যা পাওনাদারদের টাকার তুলনায় কিছুই না, এটা সমুদ্রের মতো পাওনাদের টাকা পরিশোধ অনেকটা এক ফোঁটা পানির মতো অবস্থা

ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন বিনিয়োগকারী আনতে পারবেন বলে উচ্চ আদালতে একটি আর্জি দিয়েছেন তারা যদি বিনিয়োগকারী আনতে পারে তবেই কোম্পানি চলবে, পাওনাদাররাও টাকা পাবে এটা নির্ভর করছে তারা বিনিয়োগকারী আনতে পারবেন কি-না

সার্ভারের পাসওয়ার্ড না থাকায় মেলেনি কোনো তথ্য

ইভ্যালির সার্ভারের এক্সেস না থাকায় দেনা-পাওনা লেনদেনের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ইভ্যালির সার্ভারটি অপারেট করার অনেক ধরনের চেষ্টা করেছি কিন্তু এটির পাসওয়ার্ড আমাদের কাছে নেই পাসওয়ার্ড জানতে আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা জেলে গিয়ে রাসেলের সঙ্গেও কথা বলেছি তিনি লিখিত দিয়েছেন, ‘পাসওয়ার্ডটি তার মনে নেই এটি তার ডেস্কের ড্রয়ারে একটি কালো ডায়েরিতে রাখা

এরপর আমরা দেশের এটুআই, সিআইডিসহ একাধিক আইটি এক্সপার্টদের সঙ্গে বসে পাসওয়ার্ডটি উদ্ধারের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি সার্ভারটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা অ্যামাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা শুধু একটি কথাই বলেছেপাসওয়ার্ড ছাড়া কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়

ইভ্যালির বর্তমান এমডি মাহবুব কবীর মিলন বিষয়ে বলেন, আমরা ইভ্যালির আইটি প্রধান তানভিরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম সে আমাদের বলেছে, রাসেল গ্রেফতারের আরও দু'মাস আগে সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, তখন আইডি পাসওয়ার্ড সব রাসেলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন

পরে তার আগের পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করে দেখেছে এক্সেস সম্ভব হয়নি, তারমানে রাসেল পরে আবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেছে তানভিরের অধীনে যারা কাজ করতেন তারাও পাসওয়ার্ডের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি

গেটওয়েতে আটকা আরও ২৫ কোটি টাকা

গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ইভ্যালির ৬টি গেটওয়েতে সব লেনদেন হয়েছে আমরা সেসব গেটওয়ের আটকে থাকা অর্থ গ্রাহকদের ফেরতের কথা আলোচনা করছিলাম কিন্তু তারা বলেছে, ইভ্যালির কাছ থেকে পাওনার বিষয়ে লিখিত নিয়ে এলে যে নির্ধারিত ওই গ্রাহকের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়নি, তাহলে আমরা অর্থ ব্যাক করতে পারবো

কিন্তু সার্ভারের এক্সেস না থাকায় এটাও সম্ভব হচ্ছে না কে পণ্য কিনেছে, কার পণ্য ডেলিভারি হয়নি এটা জানা সম্ভব হচ্ছে না যতোক্ষণ পর্যন্ত সার্ভার সচল না হবে ততোক্ষণ ওই ২৫ কোটি টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকবে একইভাবে সার্ভার সচল না হলে পণ্য থাকলেও কোনো গ্রাহককে পণ্য দেওয়া সম্ভব নয় কারণ সে পণ্য পেয়েছে কি-না বা আদৌ পাবে কি-না জানা সম্ভব হচ্ছে না

 

লেনদেনের তথ্য ছাড়া অডিট শেষ পর্যায়ে

ইভ্যালির বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি মানিক বলেন, হাইকোর্ট আমাদের অডিট শেষ করার জন্য নিয়োগ দিয়েছেন আমরা হুদা-ভাসি নামক এটি অডিট ফার্মকে অডিটের দায়িত্ব দিয়েছি ২৭ লাখ টাকায় তারা অডিট করছে তারা বলেছে অডিট শেষ পর্যায়ে রয়েছে জুলাইয়ে শেষ করবে অডিট আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবো

সার্ভারের এক্সেস না থাকায় গ্রাহদের লেনদেনের তথ্য ছাড়াই কীভাবে অডিট হচ্ছে জানতে চাইলে মানিক বলেন, আমরা ইভ্যালির যতো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে সেসব ব্যাংককে ট্রানজেকশানের স্টেটমেন্ট দিতে বলেছি

তারা আমাদের লেনদেনের সব স্টেটমেন্ট দিয়েছে সবচেয়ে বেশি ট্রান্সজেকশন হয়েছে নগদে নগদে লাখ লাখ ট্রানজেকশন তথ্য তারা হার্ডকপি দিতে পারেনি সফ্ট কপি দিয়েছে এছাড়া, ইভ্যালির কার্যালয়ে আমরা ঢোকার পর অনেক ডকুমেন্টস পেয়েছি এসবের ভিত্তিতেই অডিট চলছে অডিট রিপোর্টে সার্ভারের তথ্য না পাওয়ার বিয়টিও উল্লেখ থাকবে

ইভ্যালির চেয়ারম্যান বিচারপতি মানিক বলেন, আমাদের হাইকোর্ট অডিট রিপোর্টের জন্য নিয়োগ দিয়েছে অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা হাইকোর্টে সাবমিট করবো তারপর হাইকোর্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন

হাইকোর্ট আমাদের বলেছে ইভ্যালি চালানো সম্ভব হলে পরিচালনা করার জন্য, নয়তো প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের যতটুকু সম্ভব পরিশোধ করা আমরা চাইবো প্রতিষ্ঠানটি চলুক অন্যথায় যে সম্পদ রয়েছে, এর হিসাব করলে পাওনাদারদের নামমাত্র ফেরত দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে সেক্ষেত্রে কোম্পানি আইন অনুযায়ী যে লাখ টাকা পাওনাদার সে হয়তো পাবে ২৫ হাজার টাকা

এসময় উপস্থিত ছিলেন, আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মো. শামীম আজিজ, এফসিএ অ্যান্ড এফসিএমএ- এর সাবেক চিপ চার্টার্ট একাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ

প্রতারণা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় মো. রাসেল তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে   র‍্যা 

গত ২১ এপ্রিল চেক প্রতারণার মামলায় -কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জামিন দেন আদালত ওই দিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পান তিনি তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় কারামুক্ত হতে পারেননি রাসেল শামীমা নাসরিন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন

গত বছরের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বোর্ড গঠন করেন

বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ

 

×