ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক বছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ

৯০,৮০৪ কোটি টাকা বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৪১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

৯০,৮০৪ কোটি টাকা বেড়েছে

চলতি অর্থবছরে আগের ঋণ পরিশোধ না করে নতুন করে ঋণ নিয়েছে সরকার

চলতি অর্থবছরে আগের ঋণ পরিশোধ না করে নতুন করে ঋণ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে ব্যাংকে সরকারের ঋণস্থিতি ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর এক বছরের ব্যবধানে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৯০ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার ব্যাংক থেকে যে সব ঋণ নেয় তার অধিকাংশই বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে যায়। ব্যয়-সংকোচন নীতির কারণে অর্থবছরের শুরুর দিকে সরকারের অর্থ চাহিদা কম ছিল। এখন কিছু প্রকল্প সচল হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। ফলে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যে হারে খরচ বেড়েছে, সে হারে আয় না বাড়ায় ব্যাংক থেকে ধার নিতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে এ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংক খাতে ঋণ বেড়েছে ৯০ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের সাত মাসে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৩৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ বেড়েছিল মাত্র ১১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। েেকন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত সরকার বাজেট বাস্তবায়নে অর্থবছরের শেষদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে থাকে। আবার পরের অর্থবছরের শুরুতে আয় বাড়লে সে ধার পরিশোধ করে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ধার নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন আর সরকারের ব্যয়ের সঙ্গে আয়ে কম হওয়া।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরুতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। সাত মাস পর জানুয়ারি শেষে ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। সে হিসেবে আলোচিত সময়ে এ খাতে সরকারের ঋণ কমেছে ১১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। তবে সরকার এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।

আর জানুয়ারি শেষে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সাত মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৪৬ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। যদিও গত ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ আরও বেশি ছিল। ডিসেম্বর শেষে সরকার এ খাত থেকে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার মাসের ব্যবধানে ঋণ কমিয়েছে ১৯ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিশোধ বাড়িয়েছে।

এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভলবিং ফান্ড থেকে (টাকা ছাপিয়ে) ৬০ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি শেষে সরকার ওই ফান্ডের ১২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। বর্তমানে ডিভলবিং ফান্ডে সরকারে ঋণ ৪৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট-ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য সরকারের। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকেও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

×